মানিকগঞ্জ: অনুকূল আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্যায় মানিকগঞ্জে এবার কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই দেশের চাহিদা মিটিয়ে মানিকগঞ্জের মরিচ রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সিংগাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশে।
কিন্তু সরকারের অবহেলা আর স্থানীয় ব্যাপারি ও দালালদের পাল্লায় পড়ে মরিচ বিক্রির মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় চাষিরা।
মানিকগঞ্জের বরংগাইল বাজারে আসা মরিচ চাষিরা তাদের এ দুর্ভোগের কথা জানান।
জেলার শিবালয় উপজেলার পুরান সাকরাইল গ্রামের সমেজ উদ্দিন শেখের ছেলে নান্নু শেখ বাংলানিউজকে জানান, চার বিঘা জমিতে তিনি এবার মরিচের চাষ করেছেন। ওই জমি থেকে তিনি প্রতিদিন চার/পাঁচ মণ মরিচ তুলতে পারেন। প্রতি কেজি মরিচ তোলার জন্য শ্রমিকের মুজুরি দিতে হয় তিন টাকা। আর বাজারজাত করতে পরিবহন খরচ হয় আরও এক টাকা। কিন্তু বাজারে সেই মরিচ কেজি প্রতি বিক্রয় করতে হয় তিন থেকে চার টাকায়।
এ অবস্থায় মুনাফার চিন্তার চেয়ে খরচের টাকা পাওয়াটাই ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
একই গ্রামের হজরত আলীর ছেলে আব্দুর রউফ জানান, মরিচের আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। কারণ মরিচ ক্ষেত থেকে মরিচ না তুললে গাছ মরে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই মরিচ তুলতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাজারে বেশি মরিচ এলে প্রতি কেজি মরিচ দুই টাকা বা তার চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে হয়।
কৃষকদের কাছ থেকে অল্প দামে মরিচ কিনলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অধিক মুনাফায় মরিচ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছেন মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ী ও দালালরা।
বিদেশে মরিচ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মনসুর জেনারেল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আক্কাছ মিয়া জানান, মানিকগঞ্জের বরংগাইল ও ঝিটকা বাজার থেকে তাদের কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন চার/পাঁচ টন মরিচ কিনে আনেন।
বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কেনার জন্য ফরমান আলী ও আসলাম হোসেন নামে তাদের নিজস্ব দুইজন ব্যাপারি আছেন। তারাই মূলত মরিচ কেনেন। এরপর সেখান থেকে মরিচ বাছাই করে কার্টনে ভরে বিমানে করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
বিদেশে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্কাই ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির প্রতিনিধি মুহাম্মদ হুমায়ন মিয়া জানান, বিদেশে মরিচের ব্যাপক চাহিদা। মানিকগঞ্জে মরিচের দামও অনেক কম। কিন্তু অনেক সময় বিমানে করে বেশি মরিচ বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয় না। রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজ হলে প্রচুর মরিচ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
বরংগাইল বাজারের আড়ৎদার তাজ উদ্দিন ব্যাপারি জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এই বাজারে মরিচ বেচা-কেনা হয়। প্রতিদিন এই বাজার থেকে প্রায় দুইশ’ টন মরিচ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
এছাড়া প্রতিদিন ছয় থেকে সাত টন মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয় বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আলীমুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় এবার পাঁচ হাজার পাঁচশ’ ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। তবে জেলার শিবালয় ও হরিরামপুরে মরিচের আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। জেলায় এবার মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার পাঁচশ’ ৫০ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এসআই