ঢাকা: দেশের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা মানুষকেন্দ্রিক হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলা হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে।
মঙ্গলবার (০২ জুন) পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী: উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূলবক্তা ছিলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পিকেএসএফ’র পরিচালনা পরিষদের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবী।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপাক অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার, রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) পরিচালক আবুল হাসিব খান, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের জেরিয়াট্রিক নার্সিং বিশেজ্ঞ স্যালোমি এ রহিম প্রমুখ।
ড. খলীকুজ্জমান বলেন, মানুষকেন্দ্রিক উন্নয়ন করতে হলে বয়স বা পেশা নয়, সব মানুষের অধিকারের কথা আসবে। শুধু মাত্রা নবীন বা প্রবীণ নয়, চিন্তা করতে হবে সব মানুষের উন্নয়নের।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রতিনিয়ত সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। সংবিধানে আছে প্রত্যেকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানে বলা আছে, মানুষ হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক। আর এই মালিকরা যাদের রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে, তাদের সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের মালিকরা কোথায় কি অসুবিধায় পড়ে সেগুলো রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের দেখার কথা, কিন্তু সেটা হচ্ছে খুবই কম।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রবীণদের জন্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই ভাতা প্রকৃত অর্থে কতটুক কাজে লাগছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
বিকৃত মানসিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খলীকুজ্জামান বলেন, অনেক সন্তানরাই পিতা-মাতাকে প্রাপ্য সম্মানটুক দেন না। তাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
প্রবীণদের বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও মত দেন এই অর্থনীতিবিদ।
মো. আবদুল করিম বলেন, দিন দিন প্রবীণদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাই পিকেএসএফ’র সহায়তায় ৪৩টি ইউনিয়নে প্রবীণ সমৃদ্ধ কেন্দ্র খোলা হবে। এখানে প্রবীণরা তাদের মনের কথা, স্বাস্থ্যগত সেবা, পেপার পড়াসহ নানাবিধ সুবিধা পাবেন। এছাড়া পেনশন স্কিম চালুর ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হবে। একই সঙ্গে যারা দেশের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের সম্মান দেওয়ার চিন্তাও করছে পিকেএসএফ।
অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, বয়স্কভাতা ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা দরকার। যে ভাতা দেওয়া হচ্ছে তা কোনো কাজে আসে না। প্রবীণদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় প্রবীণদের ক্ষুদ্র ঋণের হারও বাড়ানোর তাগিদ দেন বজলুল হক।
বর্তমানে প্রবীণদের ভাতা প্রদানে কিছু অনিয়মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারিভাবে প্রবীণদের যে ভাতা দেওয়া হচ্ছে তাতে ১৫ শতাংশ পুরুষ এবং ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ ধনী শ্রেণির নারী প্রবীণরা রয়েছেন। প্রকৃত অর্থে দরিদ্র প্রবীণ যারা আছেন তারা সেভাবে ভাতার আওতায় আসছে না।
এ বিষয়টি সার্ভে করে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ অনুযায়ী ২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রবীণ লোক ছিলো ১ কোটি ১৩ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এই হারে প্রবীণ লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০২৬ সালে প্রবীণ লোকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৫
এসএম/এমজেএফ