ঢাকা: ভারতের বৃহত্তম জীবন বিমা কোম্পানি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া(এলআইসি) বাংলাদেশে জীবন বিমা ব্যবসার অনুমতি পাচ্ছে। আট শর্তে ‘এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানটিকে সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ(আইডিআরএ)।
ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স’র সঙ্গে যৌথভাবে জীবন বিমা ব্যবসা করার জন্য ২০১৩ সালের এপ্রিলে আইডিআরএর কাছে আবেদন করে। কিন্তু আবেদনটি নিয়ম মাফিক না হওয়ায় সে সময় নাকচ করা হয়।
পরবর্তীতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারের তদবির ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটিকে সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আগামী ৬ জুন সন্ধ্যা ৬টায় এ নিবন্ধন সনদ অনুমোদনের প্রাথমিক সম্মতিপত্র দেওয়া হতে পারে। ওই দিন ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে এলআইসির চেয়ারম্যানের কাছে সম্মতিপ্রত দিতে চান আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ।
এ বিষয় অর্থমন্ত্রীর কাছে এম শেফাক আহমেদ একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। গত ৩১ মে’২০১৫ পাঠানো ওই চিঠিতে সরকারের অনুমতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনু্ষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়েছে।
আইডিআরএ সূত্র মতে, এলআইসিকে দেওয়া ৮টি শর্তের দুটি এরইমধ্যে পূরণে সম্মতি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শর্ত দুটি হলো ১০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনে যৌথ জীবন বিমা প্রতিষ্ঠা করা এবং পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ শেয়ার এলআইসি ধারণ করা।
বাকি ৬টি শর্ত প্রাথমিক সম্মতিপত্র পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে পূরণ করে নিবন্ধন সনদ নিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। এরমধ্যে আছে পরিশোধিত মূলধনের বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের কোন উদ্যোক্তা ধারণ করবে। তবে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স উদ্যোক্তা হিসেবে থাকতে পারবে না। এই প্রতিষ্ঠানটির পরিবর্তে বাংলাদেশের যে কোন জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোক্তা হিসেবে রাখতে হবে।
এর কারণ হিসেবে আইডিআরএ বলছে, ২০১০ সালের বিমা আইনের ১৩ ধারায় বলা আছে সাধারণ বিমার জন্য নিবন্ধিত কোন কোম্পানি জীবন বিমার জন্য নিবন্ধিত হবে না। তাই পাইওনিয়ার সাধারণ বিমা কোম্পানির জন্য নিবন্ধিত হওয়ার কারণে জীবন বিমার জন্য নিবন্ধিত হতে পারবে না।
নিবন্ধন সনদের জন্য বিদেশী ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ পরিশোধিত মূলধনের সমপরিমাণ ৬০ কোটি বাংলাদেশী টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রমাণপত্র আইডিআরএ’র কাছে জমা দেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ৬০ কোটি টাকার মধ্যে বিদেশী উদ্যোক্তাদের অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিতে হবে।
মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে দেওয়া শর্তে বলা হয়েছে, কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী পদের জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১৩ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি, প্রবিধান প্রতিপালনের মাধ্যমে মনোনীত করে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। আর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ আইডিআরএ’র অনুমোদনের পর কার্যকর হবে।
অন্যান্য শর্তের মধ্যে আছে, কোম্পানির এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরে আইডিআরএ’র কাছে জমা দিতে হবে। প্রস্তাবিত কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বিমা আইন ২০১০, বিমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা ২০১৩ এবং বিদেশি উদ্যোক্তা কর্তৃক শেয়ার ক্রয় বিধিমালা ২০১৩ সহ সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি-বিধান অনুসরন করে বিবেচনা করা হবে। আর শেষ শর্তটি হলো সম্মতিপত্র পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এলআইসিকে সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে জীবন বিমা শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এলআইসি দক্ষ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা সংগ্রের আধুনিক কলাকৌশল, উন্নত অবলিখন পদ্ধতি ও নতুন নতুন পরিকল্প আনবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে স্থানীয় জনবলের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। এটি দেশের বিমা শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, প্রথমে যথাযথ শর্তপালন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এলআইসিকে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১০ সালের বিমা আইনের ৯(৩) ধারা অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন পুনঃবিবেচনার জন্য ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিল করে। ওই সময় আইডিআরএ’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সদস্য ফজলুল করিম। তখন এ বিষয়ে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তীতে ভারতীয় হাই কমিশনের উপ-হাইকমিশনার বিষয়টি আমার নজরে আনেন।
এরই ধারাবাহিকতায় এলআইসি চেয়ারম্যান চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ও ২০ মে দুটি চিঠি দেয়। চিঠিতে প্রস্তাবিত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা করা ও পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ ধারণ করার সম্মতি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত আইডিআরএ’র ৮০তম সভায় এলআইসি বাংলাদেশ লিমিটেডকে শর্ত সাপেক্ষে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশে এলআইসির বিমা ব্যবসার জন্য করা আবেদন ও আইডিআরএ’র সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলানিউজে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘নিয়ম না মেনেই এলআইসির আবেদন’ শীর্ষক শিরোনামে একটি এবং চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ‘আসছে আরও ২ বিমা কোম্পানি’ শীর্ষক শিরোনামে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৫
এএসএস/এনএস