ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

২২ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৩৩ হাজার কোটি টাকা

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
২২ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৩৩ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: সরকারি মালিকানাধীন ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে এসব প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারকরা উদাসীন।



অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সর্বশেষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে আরও জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মোট শ্রেণি বিন্যাসিত ঋণের পরিমাণ ১শ’ ৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

সোমবার (৮ জুন) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও বেসিক ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ৩২ হাজার ৯শ’ ৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ১১ হাজার ১শ’ ৫২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে ৭ হাজার ৬শ’ ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে ৫ হাজার ১শ’ ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাছে ৩ হাজার ২শ’ ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে ২ হাজার ৩শ’ ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল করপোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ৩শ’ ৯৬ কোটি ১২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ৯শ’ ৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে ১ হাজার ২শ’ ১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে ৩শ’ ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি’র (সিপিএ) কাছে ৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমসি) কাছে ২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে ৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা পাবে ব্যাংকগুলো।

এছাড়া বিসিআইসি’র কাছে ৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বিটিএমসি’র কাছে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বিএডিসির কাছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে ১০ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বিএসএফআইসি’র কাছে ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা শ্রেণি বিন্যাসিত ঋণ রয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ করা হলে আদায়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারি মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর উৎপাদনের তুলনায় অপচয় হচ্ছে বেশি।

এসব প্রতিষ্ঠানে অপচয় ও দুর্নীতি রোধ করা গেলে সংস্থাগুলোকে লাভজনক করা সম্ভব। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, সংস্থাগুলো চরম অব্যবস্থাপনা, নজরদারি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্নীতির কারণে লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

বছরের পর বছর ধরে লোকসানে থাকার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলোর রাষ্ট্রীয় মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার দাবি উঠছে। বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলে সরকারকে আর লোকসানের বোঝা বইতে হবে না বলেও মনে করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানাভাবে লাভজনক করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেশি দায়ী। অতীতের তুলনায় ঋণ ও ভর্তুকি কিছুটা কমেছে। তবে এটা আরও কমা উচিত।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপিঋণ আদায়ে ব্যাংক খাতের আর্থিক ব্যবস্থা সঠিক হতে হবে। কারণ, ব্যাংক খাত দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের আগে এসব টাকা আমানতকারীদের বিনিয়োগ এটা মনে রাখতে হবে। না হলে কোনোদিন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
এসই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।