ঢাকা: ভারতে বাজার হারিয়ে এখন বাংলাদেশে ভর করে ক্ষতি কাটাতে উঠেপড়ে লেগেছে ম্যাগি। এ লক্ষ্যে এর প্রস্তুতকারক বহুজাতিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পগোষ্ঠী নেসলে শুরু করেছে ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা।
হঠাৎ করে ম্যাগির এত বেশি প্রচারণায় জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। এছাড়াও তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) সংবাদসম্মেলন করে ম্যাগির পক্ষে সাফাই গেয়ে এর ভালোত্বের সনদ দেওয়ায় সন্দেহ বেড়েছে।
বাংলাদেশের বাজারে যেসব ম্যাগি পাওয়া যায় তার মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত উভয়ই রয়েছে। সেকারণেই ভারতের বাজারে যে ম্যাগি বিক্রি করা যাচ্ছে না সেগুলোই বাংলাদেশে চালাতে এত তোড়জোর, এমন সন্দেহও ঘনীভূত হচ্ছে জনমনে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছে ভারত থেকে যাতে ম্যাগি আমদানি না হয় সে লক্ষ্যে কড়া নজরদারি চলছে।
এদিকে, নুডলসে অতিরিক্ত সীসা থাকায় ভারতের বাজার থেকে ম্যাগি কেবল তুলেই নেওয়া হয়নি নেসলের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেশি দেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে আসা বিতর্কের ঝড় চললেও বাংলাদেশে ম্যাগি নুডলসের অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন সম্পন্ন করা যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি ম্যাগি নুডলসেরও চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে কিন্তু চলছে ঢিমেতালে।
তবে এই সময়ে ভারত থেকে অবিক্রিত ম্যাগি নুডলস যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ পণ্য আমদানি না করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানায় দায়িত্বশীল সূত্রটি।
ভারতে বাজারজাত ম্যাগি নুডলসের প্যাকেটগুলোতে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত সীসা। সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুন বেশি সীসা রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েই ভারত সরকার ম্যাগির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ শিশুদের জন্য এই খাদ্য হয়ে উঠবে মারাত্মক ক্ষতিকর।
এছাড়াও নুডলসের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত মোনোসোডিয়াম গ্লটামেটও পাওয়া গেছে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি। এমএসজি আজিনোমোটো নামে পরিচিতি এই উপাদান থাকে ম্যাগিতে ব্যবহৃত সোডিয়ামে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে ভারতের বাজারে বিক্রিত নুডলসের চেয়ে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রিত নুডলসে ক্ষতিকর সোডিয়াম ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা অনেক বেশি। ফলে বাংলাদেশের নুডলস সন্দেহমুক্ত হতে পারছে না।
ভারতে যেখানে ৯৫ গ্রামের প্যাকেটে চর্বি ব্যবহৃত হয় ১৪ গ্রাম সেখানে বাংলাদেশে ৬২ গ্রামের প্যাকেটে চর্বি থাকে ১০.৪ গ্রাম। তুলনামূলক হিসাবে যা ১.৩০ গ্রাম বেশি। এর মধ্যে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট ভারতের ৯৫ গ্রামের প্যাকেটে রয়েছে ৬ গ্রাম সেখানে বাংলাদেশের ৬২ গ্রামের প্যাকেটে রয়েছে ৪ গ্রাম। তুলনামূলক হিসাবে বাংলাদেশের প্রতি প্যাকেটে ক্ষতিকর এই ফ্যাট প্রায় ১ (প্রকৃত .৯) গ্রাম করে বেশি রয়েছে। আর ভারতের ৯৫ গ্রামের নুডলস প্যাকে সোডিয়ামের মাত্রা ১১৩০ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশের ৬২ গ্রামের প্যাকেটে ৭৬৮.৮ মিলিগ্রাম। এই মাপের ভারতীয় নুডলসের চেয়ে ৩১.৪ মিলিগ্রাম বেশি সোডিয়াম রয়েছে বাংলাদেশের নুডলসে।
এসব তথ্য সামনে আনা হলেও বিএসটিআই তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চূড়ান্ত করছে না।
এদিকে, বাংলাদেশেও উঠেছে ম্যাগি নুডলস বন্ধের দাবি। বিষয়টিতে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন ভোক্তা অধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তারাও সরকারের উদাসীনতার কথা উল্লেখ করে বলেছে, এমনটা চলতে থাকলে দেশে শিশুস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।
পণ্যটি নিষিদ্ধ না করে তার পক্ষে বিএসটিআই’র সাফাই ও নেসলের হঠাৎ ব্যাপকভিত্তিক বিজ্ঞাপনী তোড়জোরেও এসব সংগঠন তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অনেকের ধারণা, বিএসটিআই’র একটি দুর্নীতি পরায়ণ চক্রকে হাত করে এই সার্টিফিকেট বাগিয়েছে নেসলে বাংলাদেশ।
সীসা মানুষের শরীরের লিভার ও কিডনিকে ধ্বংস এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর সে কারণেই সম্প্রতি ভারতের উচ্চ আদালত ম্যাগি নুডলসকে সে দেশে নিষিদ্ধ করেছেন। নেসলে কোম্পানি উত্থাপিত অভিযোগ স্বীকার করে, ভারতের বাজার থেকে ম্যাগি নুডলস প্রত্যাহার শুরু করেছে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ যেনো হয়ে না ওঠে ভারতের নিষিদ্ধ ম্যাগির বাজার সে লক্ষ্যে সতর্কতার মাত্রা বাড়ানোর দাবি করেছেন তারা।
বাংলাদেশ সময় ১১৩৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
এমএমকে