ফেনী: চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চালু হয় দেশের তৃতীয় ছাগলনাইয়া-শ্রীনগর সীমান্ত হাট। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার বসে এ হাট।
প্রতি হাটে ৫-৬ লাখ টাকা কেনাবেচা হলেও এর ৮০ ভাগই করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে বেচা-কেনার বেশিভাগ অর্থ চলে যাচ্ছে ভারতে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৬টি হাটে বিক্রি হয়েছে মোট ৮ কোটি টাকার মতো। যার সিংহভাগ চলে গেছে ভারতে।
হাটটি নিয়ে যেভাবে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা উৎসাহী সেভাবে উৎসাহী নয় ফেনীর ছাগলনাইয়ার ব্যবসায়ীরা। বরং তারা এখন অনেকাংশেই নিরাশ। এ হাটটিতে বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ প্রসাধনী সামগ্রী বেচা-কেনা হয়।
সীমান্ত হাটটিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম, বিলোনীয়ার ব্যবসায়ীরা উৎসহী হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হয় এ অঞ্চলে মানুষ প্রচুর কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করে। কিন্তু এ পণ্য ভোগ করার জন্য ভোক্তার অভাব রয়েছে। আর অর্থনৈতিকভাবেও শ্রীপুর অঞ্চলের মানুষজন কিছুটা দুর্বল।
হাটটির কারণে কৃষিপণ্য বাংলাদেশের বাজারে বেচা-কেনা করে দক্ষিণ ত্রিপুরার অনেক পরিবারই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি মঙ্গলবার এ হাটে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি হলে তার মধ্যে চার লাখ টাকাই বিক্রি করে ভারতের ব্যবসায়ীরা। এ বাজারে বাংলাদেশের ভোক্তারা যেখানে প্রতিজনে সাত/আট হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করে সেখানে ভারতের লোকজনের ক্রয় এক হাজারের ওপরে উঠেনা।
বাংলাদেশের নুর হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত হাটটিতে ব্যবসা করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারছেনা। ফলে এ অঞ্চলের লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে যাচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
দক্ষিণ ত্রিপুরা নিবাসী সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী নেপাল চন্দ্র নাথ বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত হাটটিতে বাংলাদেশের ক্রেতারা প্রচুর খরচ করছে। এ সীমান্ত হাটটির কারণে ত্রিপুরার জনপদ অনেক উপকৃত হচ্ছে।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে উপজেলার মোকামিয়ায় সীমান্ত হাটের উদ্বোধন হয়। ওই দিন থেকে শুরু হওয়া সীমান্তহাটে ভারতের ব্যবসায়ীরা প্রসাধনী সামগ্রী, ক্রোকারিজ সামগ্রী, কনফেকশনারি সামগ্রীসহ মসলা, হলুদ, আদা, ধনিয়া, সরিষার তেল, জিরা, কিসমিস, গুড়ো দুধ, হরলিক্স, নারীদের অ্যামিটেশন গহনা সামগ্রী, কাপড়-চোপড় এবং কোদাল ইত্যাদি বিক্রয় করতে দেখা গেছে।
অপরদিকে বাংলাদেশিরা বিক্রি করছে শার্ট-প্যান্ট, নারিকেল, প্রসাধনী সামগ্রী, তরল দুধ, খেজুর, বিস্কুট-চানাচুর, সেমাই, গুড়, কোমল পানীয়, মাছ, গাজর, শুটকি, তেল, মশারি, নান-প্লাস্টিক সামগ্রী ও জুতা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ হাটের প্রতি সপ্তাহেই বাংলাদেশের চাইতে বেশি বিক্রি করে ভারতের ব্যবসায়ীরা। এর কারণ হলো বাংলাদের প্রচুর ভোক্তা রয়েছে। কিন্তু তাদের সে পরিমাণ ভোক্তা নেই, রয়েছে উৎপাদক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিঃসন্দেহে বর্ডার হাট সীমান্তবাসীর জন্য সুখবর। কিন্তু বাংলাদেশ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত সবকটি বাজারে দেখা গেছে বাংলাদেশ পণ্য সামগ্রী বিক্রির চেয়ে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারে ভারতের মানুষের চাহিদা আছে এমন অন্যান্য পণ্য বিক্রয়ের সু-ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলে ভারতের সঙ্গে বাজার প্রতিযোগিতায় ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
এএটি/এসএইচ
** খুলে দেওয়া হলো কসবা বর্ডার হাট