ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উৎসে আয়কর

স্বতন্ত্র কর অঞ্চল, আদায়ে পদক্ষেপ

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
স্বতন্ত্র কর অঞ্চল, আদায়ে পদক্ষেপ

ঢাকা: আগামী অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত হবে আয়কর (প্রত্যক্ষ কর)। সাধারণত আয়করের সিংহভাগই আসে উৎসে আয়কর খাত থেকে।


উৎস আয়কর ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হওয়ায় আগামী অর্থবছর উৎসে কর কর্তনে একটি স্বতন্ত্র কর অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

একই সঙ্গে আগামী অর্থবছর উৎস আয়কর আদায়ে জোর পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সিটি, ডিসি, এসপি ও এনবিআর’র মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি সব দপ্তরে বিধি মোতাবেক উৎসে কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছে এনবিআর। মন্ত্রণালয়-বিভাগ প্রকল্পের বেতন-ভাতা, পরামর্শ ফি, পণ্য ও সেবা ক্রয়ের বিল পরিশোধের সময় উৎসে কর কর্তনের বিধান থাকলেও সঠিকভাবে কর্তন হয় না।

পদক্ষেপ নিতে চলতি অর্থবছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রধানকে বিধি মোতাবেক উৎসে আয়কর কর্তন, সরকারি কোষাগারে জমা ও মনিটরিং করতে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছর ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর খাতে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আয়করের প্রায় ৫৪ শতাংশ আদায় হয় উৎসে আয়কর থেকে। আগামী অর্থবছর কঠোরভাবে উৎসে আয়কর আদায়ের পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। এরই অংশ হিসেবে ২ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান চার সিটি করপোরেশন, সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে উৎসে কর আদায়ে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে (ডিও লেটার) সরকারিভাবে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের বিপরীতে নিয়মমাফিক নির্ধারিত হারে উৎসে আয়কর ও মূসক (মূল্য সংযোজন কর) কর্তনের অনুরোধ জানান। সিটি করপোরেশন পণ্য ও সেবা ক্রয়, পরামর্শ ফি, বেতন-ভাতা পরিশোধ, লাইসেন্স নবায়ন, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বিভিন্ন খাত থেকে উৎসে আয়কর ও ভ্যাট কর্তন করে থাকে।
 
এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা, মনিটরিং ও উৎসে কর আদায়ে পদক্ষেপ নিতে ঢাকার দুই মেয়র, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়রকে অনুরোধ জানান চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান চিঠিতে উল্লেখ করেন, কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প বা কাজের বিল পরিশোধের সময় উৎসে কর কর্তন করে না। আবার অনেক সময় অজ্ঞতার জন্য নির্দিষ্ট হারের তুলনায় কম উৎসে কর কর্তন করলেও মনিটরিংয়ের অভাবে সময় মতো তা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হচ্ছে না।

সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সঠিকভাবে উৎসে কর আদায়ে চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সহায়তা চান তিনি। অপরদিকে, আগামী অর্থবছর সর্বনিম্ন ০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত প্রায় ৬০টি খাত থেকে উৎসে কর আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি অর্থবছরে ১৩টি নতুন খাত যুক্ত করে মোট ৫২টি খাত থেকে উৎসে কর আদায় করে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছর সমবায় সমিতি, পোল্ট্রি খাত, বেশ কয়েকটি চাষ, অবৈধ বিদেশি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাতা, অনিবাসী ব্যক্তি, ঠিকাদার বিল, চিকিৎসকদের ফি, রয়েলটি ফি, সিগারেটের ব্র্যান্ডরোল, ইট প্রস্তুতকারক, গৃহসম্পত্তি আয়সহ বেশ কয়েকটি সেবা খাতে উৎসে কর বসানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, উৎসে কর হারের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে তা আদায়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তাই উৎসে কর আদায়ে একটি স্বতন্ত্র কর অঞ্চল গঠনের কাজ করছে এনবিআর। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রস্তাবিত বাজেটে বলেন, বর্তমানে উৎসে কর হচ্ছে আয়কর আদায়ের অন্যতম প্রধান উৎস। বিধি অনুসারে উৎসে কর কর্তন কার্যক্রম পরিচালনা ও নিবিড় মনিটরিংয়ের প্রয়োজনে স্বতন্ত্র কর অঞ্চল গঠন করা হবে।

বাজেটে স্বতন্ত্র কর অঞ্চল গঠনের প্রস্তাবের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে বলে স্বীকার করেন আয়কর অনুবিভাগের একজন সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, সব কর অঞ্চল ও সার্কেল অফিস উৎসে কর আদায় করে থাকে। নির্দেশনার পর মাঠ প্রশাসন এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
উৎসে কর কর্তন ও জমা বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এ বছর থেকে উৎসে কর খাতে মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
আরইউ/টিআই/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।