ঢাকা: ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ভূমিকম্পের প্রভাব, ক্ষয়ক্ষতি ও জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় ১ হাজার ৩৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক।
ভূমিকম্প মোকাবেলার এ প্রকল্পসহ একনেক সভায় ২ হাজার ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে জিওবি ৬৫২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘আরবান রেজিলেন্স’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট (ডিএমডিপি) ও সিলেট মহানগরী এলাকায় ভূমিকম্পের মতো বৃহদাকারের দুর্যোগ জরুরি অবস্থা মোকাবেলার দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে গবেষণা ও ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে। ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও ওয়্যার হাউজ নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে পরামর্শক সেবা সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রকল্প প্রসঙ্গে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের আশপাশে সকল স্থানে ভূমিকম্প হয়েছে। আল্লাহ কিন্তু আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। ঢাকা ও সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পের সঙ্গে আমরা সরাসরি মোকাবেলা করতে পারবো না। কিন্তু ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘প্রকল্পের আওতায় আমরা ভূমি সার্ভে করবো। কোথায় কতো তলা বিশিষ্ট বাড়ি তৈরি করা যাবে। কোথায় কি পরিমাণে বাড়ি-ঘর তৈরির উপাদান ব্যবহার করা যাবে সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে দুর্গম এলাকায় যাতে করে সহজে পৌঁছানো যায় সেসব সরঞ্জামও কেনা হবে। ’ যোগ করেন মন্ত্রী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত বিভিন্ন রাস্তা মেরামতে এখন থেকে পুরনো নির্মাণ সামগ্রী পুনরায় ব্যবহার করা হবে। একনেক সভায় এ সংক্রান্ত আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত এ প্রকল্পটির নাম ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সড়ক সমূহের রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কোল্ড রি-সাইক্লিং প্ল্যান্ট ও ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ’।
প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০১৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করবে বলে একনেক সভায় জানানো হয়।
বাংলাদেশে সড়ক মেরামতের ক্ষেত্রে একেবারে নতুন এ প্রযুক্তি নিয়ে একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকার রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে প্রতিবছর রাস্তা মেরামত করতে হচ্ছে। এতে করে রাস্তার উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে এবং পানি নিষ্কাশন ঠিকমতো না হতে পেরে জলাবদ্ধতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকার দক্ষিণে রাস্তা মেরামতে পুরনো ব্যবহৃত উপাদানগুলোর ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার করার। আশা করছি, এর ফলে রাস্তার উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে না। এ কাজটি করতে যে প্রযুক্তি এখানে ব্যবহৃত হবে তার নাম ‘কোল্ড রি-সাইক্লিং প্ল্যান্ট’। এতে করে রাস্তাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ যেমন সহজ হবে তেমনি অর্থেরও সাশ্রয় হবে।
দেশে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ২৪৯৪টি লেভেল ক্রসিং গেট রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭২টি লেভেল ক্রসিং গেটে সরকারিভাবে ১৮৮৯ জন গেট-কিপার নিয়োগসহ সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য একনেক সভায় আলাদা দু’টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। মোট ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭ সাল নাগাদ প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পটি সম্পর্কে একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উল্লেখিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এক্ষেত্রে কোনো গেট কিপার না থাকায় দুর্ঘটনা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে নিরাপদ ট্রেন চলাচল ও জানমালের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে তেমনি কিছু কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।
কক্সবাজার জেলায় উপকূলীয় বাঁধের আওতায় ২০টি পোল্ডার পঞ্চাশ বছরের পুরনো। এর মধ্যে ৬টি পোল্ডার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে এ এলাকায় লোনা পানি সহজেই ঢুকে পড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে ক্ষতিগ্রস্থ ৬টি পোল্ডার নতুন করে মেরামত করবে সরকার। এজন্য একনেক সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মোট ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে, সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৩০টি উপজেলায় শস্য নিবিড়তা বাড়াতে একনেক সভায় আরো একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। মোট ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি বিপণন অধিদফতর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ২০১৯ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
সভায় জানানো হয়, জাতীয় গড় শস্য নিবিড়তার ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগের গড় কম। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ এলাকায় উন্নত জাত, মানসম্পন্ন বীজ, বালাই ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভায় ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার সাঙ্গু ও চাঁদখালী নদীর উভয় তীর সংরক্ষণে অপর একটি প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫
এমআইএস/আরইউ/এমজেএফ/এএসআর