ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাঁচা মরিচে ‌‌‌‌‌‘লাল’ কৃষকের খেত!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
কাঁচা মরিচে ‌‌‌‌‌‘লাল’ কৃষকের খেত! ছবি : জি এম মুজিবুর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকগঞ্জ ঘুরে: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় জোকা এলাকার দিনমজুর কৃষক আজহার উদ্দিন। অন্যের কাছ থেকে দেড় বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে মরিচ চাষ করেন তিনি।

প্রায় তিন মাস অর্থ ও শ্রম ব্যয় করার পর গাছে ধরেছে মরিচ। কিন্তু সেই মরিচই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার।

সপ্তাহ খানেক আগে পাঁচ টাকা দরে মরিচ বিক্রি করেছেন তিনি। অথচ প্রতি কেজি মরিচ ওঠানোর জন্য খরচ হয় তিন টাকা। এর পরে অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে মরিচে কোনো লাভ থাকে না।

এই অবস্থা দেখে রাগে ও ক্ষোভে জমি থেকে তিনি মরিচ তোল‍াই বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে সবুজ মরিচ খেতে পেকে লাল হয়ে গেছে। সেই লাল মরিচ জমিতে পড়ে জমির রংও হয়ে উঠেছে লাল!

অন্য অবাদের লক্ষ্যে জমি পরিষ্কার করার জন্য সোমবার (২২ জুন) লাল মরিচসহ মরিচ গাছ তুলছিলেন আজহার উদ্দিন। এসময় কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘প্রায় মাস খানেক ধরে মরিচের দাম আছিলো ৫ ট্যাকা কেজি। অথচ প্রতি কেজি মরিচ ছিঁড়তে (ওঠানো) নাগে (লাগে) ৩ ট্যাকা। তাই মরিচ ছিড়া বাদ দিয়া অন্য আবাদ করার চিন্তা করতাছি। ’

আজহার বলেন, ‘একবিঘা জমি নিড়ানি দিতে খরচ হইছে ১৪’শ ট্যাকা। কিন্তু হাজার ট্যাকার মরিচই বেচতে (বিক্রি) পারি নাই। ‘

প্রতিবিঘা মরিচ ক্ষেতে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু অনেকে একবিঘা জমিতে দুই হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারেননি।

ঘিওর উপজেলার মরিচ চাষি আলামিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করতে হয় ৫ টাকা। ছিঁড়তে (তুলতে) খরচ হয় ৩ টাকা। মরিচ ছিঁড়ে কী করবো? তবে রমজান মাসের মতো আগের এক মাস দাম পেলে বাঁচতে পারতাম। এখন লাল মরিচ বিক্রির সুযোগ নেই, তাই মরিচ গাছ অনেকেই তুলে ফেলছে। ’

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, একবিঘা মরিচে চারবার আগাছা পরিষ্কার করতে খরচ হয় প্রায় ‍পাঁচ হাজার টাকা। ১৮শ’ টাকা খরচ করে ৫০ কেজি টিএসসি সার ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া সেচ, বিষ ও জমির খরচসহ বিঘাপ্রতি প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয় মরিচ চাষিদের।

অনেক যত্ন করে মরিচ চাষ করেছেন আসলাম। উৎপদিত মরিচের ন্যায্য দাম না পেয়ে মনের কষ্টে মরিচ গাছ তুলে ফেলছেন তিনি।

আসলাম জানান, ১০ হাজার টাকায় অন্যের জমি বন্ধক নিয়েছেন তিনি। মরিচ চাষে খরচ হয়েছে আরও প্রায় ১০ হাজার টাকা। বাজারে মরিচের যে দাম, আমরা বাঁচবো কি করে?

তিনি বলেন, ১৫/২০ টাকা কেজি দরে সারা বছর মরিচের দাম পাওয়া গেলে আমাদের একটু গতি হতো।

এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জের বাজারে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়। আর মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সেই মরিচ বিক্রি করতে হয় ৫/৬ টাকায়।

ধলেশ্বরীর রূপালি জলে রূপে অপরূপ মানিকগঞ্জ। শস্য-শ্যামল সবুজে ভরা এ অঞ্চল। দিগন্তে চোখ মেলতেই চোখ আটকে যায় মরিচ খেতে। সবুজ মাঠের পাশেই চোখে পড়ে অসংখ্য মরিচ খেত। যেখানে খেতের জমিতে বিছিয়ে আছে পাকা লাল মরিচ। প্রতিটি লাল মরিচ যেন দিনমজুর কৃষকের হৃদয়ে বয়ে চালা লাল রক্তক্ষরণ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
এমআইএস/টিআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Veet