ঢাকা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয়ের প্রমাণ মিলছে। ব্যাংকের কার্যক্রম, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও কর্মকাণ্ড প্রচারে বহুল পঠিত-প্রচারিত সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন নেওয়ার নিয়ম না মানায় এসব ব্যাংকের বিজ্ঞাপনের অর্থ অর্ধেকই চলে যাচ্ছে নাম সর্বস্ব পত্রিকাগুলোতে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক অগ্রণী ২০১৪ সালে বিজ্ঞাপন প্রচারে বরাদ্দ দিয়েছিল ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায়।
২০১৪ সালে যে সব সাপ্তাহিক, মাসিক ও সাময়িকীতে এই ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে সেগুলো হলো- স্বাধীনতার দেশ সংবাদ, স্টার ভিশন নিউজ, বাংলানিউজ ৩১, বাস্তব সত্যবাদি, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা নিউজ, জেএনএস নিউজ, ওয়ার্ল্ড ফটো নিউজ এজেন্সী, অনুবীক্ষণ, অপরাধ চিত্র, ব্যাংক বীমা নিউজ, ঢাকা গেজেট, সাপ্তাহিক তৃতীয় মাত্রা, রয়েল নিউজ এজেন্সী, পাক্ষিক প্রিয় বার্তা, অপরাধ অনুসন্ধান, ব্যাংক বীমা শিল্প উন্নয়ন নিউজ, মানব সম্পদ ও ব্যাংকার সংবাদ, সাপ্তাহিক মিডিয়া এক্সপ্রেস, এশিয়া ডাইজেস্ট, জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধে নিউজ, লিড নিউজ, পাক্ষিক মানি টাইম, এলিট নিউজ, আমজনতা, মাসিক নয়াবার্তা, শিরোমনি, আরম্ভ, নারী ও প্রতিবন্ধি উন্নয়ন নিউজ, কিং হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন, আল মিনার, সাপ্তাহিক নারীর কথা, গ্লামার মিডিয়া, বাংলাদেশ বিনোদন সংবাদ, রাজধানীর খবর, তারা নিউজ, জরুরী সংবাদ, উত্তরবঙ্গের খবর, হিউম্যান রাইট রিভিউ, নিউজ ফেয়ার, সাপ্তাহিক অন্যস্বর, দেশের কণ্ঠ, জাতীয় সাংস্কৃতিক নিউজ, এন্ট্রি ড্রাগ নিউজ, গণধনি, মাদক প্রতিরোধ নিউজ, উত্তমাশা, আমাদের স্বাস্থ্য, অর্থ বাণিজ্য বার্তা, অপরাধ বিচিত্রা, গণ মানুষের কথা, অপরাধ অনুসন্ধান, শব্দ মিছিল, দায়িত্ব, প্রতারণার সংবাদ, বাণিজ্য জগত, চলামান বাংলা, আজকের দিশারী।
অগ্রণী ব্যাংক ছাড়াও একই পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে সোনালী, রূপালী, জনতাসহ সব সরকার মালিকাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো থেকে। যাদের প্রত্যেকের বার্ষিক বিজ্ঞাপন বরাদ্দ থেকে কম করে হলেও প্রায় দুই কোটি টাকা চলে যাচ্ছে এসব আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায়।
আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্রচার সংখ্যা থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করতে। তবে আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হবে।
আর এসব পত্রিকার সবগুলোতেই বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন স্বাক্ষরজ্ঞানহীন নারীরা। দিনের পর দিন ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগে বসে থেকে অভাবের দোহাই দিয়ে বিজ্ঞাপন নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে অগ্রণী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায় ব্যাংক বিজ্ঞাপন দিতে ব্যাংক আগ্রহী নয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এসব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে ফোনে তদবির করেন। না দিলে নানা রকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন ওই কমর্কর্তা।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালার (২০০৮) ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর প্রকাশিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত অর্ধ সাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক বা সাময়িকীতে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য নতুন নিদের্শনা প্রদান করা হলো।
নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পত্রিকার প্রচার সংখ্যার ভিত্তিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। প্রচার সংখ্যা হতে হবে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজারের মধ্যে। আর দৈনিক পত্রিকার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন প্রচার সংখ্যা হতে হবে ৬ হাজার। এর চেয়ে কম হলে কোনো পত্রিকাতেই বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না।
কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো এসব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশ মানছে না। নিজেদের ইচ্ছেমত বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মরতুজা আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের একটি নিদিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের গেজেটে। এর ব্যত্যয় ঘটলে গেজেট অনুযায়ী কেন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে না জানতে চাওয়া হবে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৫
জেডএম