ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অর্থনীতির পালে হাঁড়িভাঙার হাওয়া

সাজ্জাদ বাপ্পী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
অর্থনীতির পালে হাঁড়িভাঙার হাওয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর: রংপুরের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে হাঁড়িভাঙা জাতের আম। আম চাষে গত মৌসুমে সফলতার মুখ দেখায় এবারও চাষীরা ঝুঁকে পড়েছেন হাড়িভাঙা আম চাষে।

এদিকে এ আমের কারণে রংপুরে কমে গেছে রাজশাহীর উন্নতজাতের অনেক আমের কদর।     

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদাগঞ্জ হাটে এ আমের বেচা বিক্রি চলছে। দেশের পাশাপাশি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে এ আম।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রংপুরের তিন উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার মেট্রিক টন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার আমের চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা এখানে জমি কিনে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন।

জানা গেছে, এ তিন উপজেলার আমের ব্যাপক সুখ্যাতি থাকায় তা দেশ ছেড়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

এমন কি রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের কারণে এখানে রাজশাহীর আমের তেমন কোনো কদর নেই।

হাঁড়িভাঙা আম সুস্বাদু হওয়ার কারণে ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, কালীভোগসহ উন্নতজাতের আম বিক্রিতেও ভাটা পড়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগান মালিকরা রংপুর থেকে হাঁড়িভাঙা আমের চারা নিয়ে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছেন।

তবে রাজশাহীর দু এক জায়গায় এ আমের চাষ হলেও রংপুরের সেই হাঁড়িভাঙার মতো স্বাদ ও গন্ধ নেই বলে দাবি করেছেন রংপুরের আম ব্যবসায়ী ও চাষীরা।

রংপুর জেলার পদাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের স্টেশন বাজার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাঁড়িভাঙা আমের বড় পাইকারী হাট। এ হাট থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ভরে হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

রংপুরের ফলের আড়ত ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বসেছে হাঁড়িভাঙা আমের হাট। সেখান থেকেও পাইকাররা আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলায়।

পদাগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধু হাঁড়িভাঙা আমের বাগান। অনেকেই আবার বাড়ির আঙিনা, উঠান কিংবা ফসলি জমিতেও এ আমের চারা রোপন করেছেন।

কুতুবপুর, খোড়াগাছ পাইকারের হাট, পদাগঞ্জ, কদতমলী, পীরের হাট, তালপুকুর, মাঠের হাট, আখড়ের হাট ছাড়াও এলাকা জুড়ে আমের চাষ।

এখানকার মাটি আম চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী হওয়ায় ওই এলাকার চাষীরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম বাগানে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।

বাগান মালিক রাসেল আমিন জানান, তিনি তিন একর জমিতে আমের বাগান করেছেন। গত বছর প্রথম আম বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার। এবার চার লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন।

হাঁড়িভাঙা আম কিনতে রাজশাহী থেকেও ক্রেতারা পদাগঞ্জে ছুটে আসছেন বলে জানান তিনি।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জুলফিকার হায়দার জানান, আমের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারাদেশে হাঁড়িভাঙা আমের বিস্তার ঘটেছে। হাঁড়িভাঙা আমে রোগবালাই কম হয়। এছাড়া চারা লাগানোর দুই বছর পরই গাছে মুকুল আসে।

আর পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সে গাছে পুরোদমে আম আসতে শুরু করে। এছাড়া বোঁটা শক্ত হওয়ায় গাছ থেকে তা অকালে ঝরে যায় না। পূর্ণাঙ্গ একেকটি আমের ওজন হয় চারশ থেকে পাঁচশ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এসএন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।