মংলা থেকে: সবুজে ঘেরা সুন্দরবন ঘেষে মংলা বন্দরের জয়মনিতে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক নৌবন্দরভিত্তিক খাদ্যগুদাম (কনক্রিট গ্রেইন সাইলো)।
প্রায় সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ সাইলো উপকূলবাসীর ত্রাণ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ১৯টি জেলার খাদ্য নিরাপত্তা দেবে।
আমদানি করা খাদ্যশস্য বিষক্রিয়া ছাড়া মজুদ ও দ্রুত সময়ে খালাসের জন্য জাপান ডেবট ক্যান্সেলেশন ফান্ড ও বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এ সাইলো। ইতিমধ্যে ৭৭-৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে সাইলো’র নির্মাণকাজ। বিশালাকারের ক্রেনসহ নানা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজে ব্যস্ত বহু শ্রমিক। পশুর নদকে কেন্দ্র করে সুবিশাল এ সাইলোর নির্মাণযজ্ঞ দেখতে ভীড় করছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা কৌতূহলীরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ১ম বার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও বৈদেশিক মন্দা চলছিল। সে সংকট কাটতে না কাটতেই ২০০৯ সালের মে মাসে খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়। এতে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ভবিষ্যতে এমন ঝড় পরবর্তী সঙ্কট মোকাবেলায় এবং অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল না থেকে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তখন উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্য মজুদের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে সারাদেশে খাদ্য গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নতুন খাদ্য গুদাম, সাইলো ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিদ্যমান খাদ্য গুদাম ও অন্যান্য অবকাঠামো মেরামত ও আধুনিকায়নকে বর্তমান সরকার তৃতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করছে।
এরই অংশ হিসেবে মংলাতে এ সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ৩০ জুন, ২০১৫। পরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচশ ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সাইলোর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে বেটস কনসাল্টিং সার্ভিসেস লি. এন্ড রিভার কনসাল্টিং ইউএসএ।
মংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা মনে করছেন, এই সাইলো নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে। এতে মংলা বন্দরের কাজের গতিশীলতা ফিরে আসবে এবং খাদ্যশস্য খালাসে অপচয় হ্রাস পাবে। সাইলোর নির্মাণ শেষ হলে মংলার রূপ বদলে যাবে।
মংলার স্থানীয়রা মনে করছেন, এ সাইলোর কাজ সম্পন্ন হলে এ এলাকার বেকার যুবকরাই আগে এখানে চাকরি পাবেন।
জয়মনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের শুধু সুন্দরবন আর মংলা বন্দর ছিলো। এখন আমাদের নতুন গর্বের নাম সুউচ্চ সাইলো! যা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে।
তিনি জানান, সাইলোর কারণে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে জয়মনি এলাকার জমিজমার দাম।
মংলা সাইলো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মো. গাজী উর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মংলা বন্দরে প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কনক্রিট গ্রেইন সাইলো নির্মাণের ৭৭-৮০ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, উপকূলের ১৯টি জেলার খাদ্য নিরাপত্তা দেবে নির্মাণাধীন এ সাইলো।
বাগেরহাট-৩ আসনের (রামপাল-মংলা) সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, সাইলোটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প এবং তাঁর পরিকল্পনা অনুসারেই এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাইলোর শতকরা ৭৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাইলোটির নির্মাণ শেষ হলে গোটা মংলা অঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে ।
** প্রাণ ফিরছে ‘মৃতপ্রায়’ মংলা সমুদ্রবন্দরে
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এমআরএম/আরআই