ঢাকা: কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের চীন সফরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।
মঙ্গলবার (৩০জুন) বাংলাদেশ সময় দুপর দেড়টার দিকে (স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে তিনটায়) চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
৭০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল নির্মাণ করা হবে।
সড়কপরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও চীনের পরিবহনমন্ত্রী ইয়াং চুয়ানতাগ’র উপস্থিতিতে বাংলাদেশের সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারম্যান লিউ কুইতাও চুক্তিতে সই করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেসসচিব আসিফ কবীর। তিনি বাংলানিউজকে জানান, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দু’দেশের প্রতিনিধিদলের মাঝে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনায় দু’দেশের মন্ত্রীদ্বয় নিজনিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় মন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশেষ করে সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ ও কৃষিসহ বিভিন্নখাতে বিনিয়োগ এবং অর্থায়নের জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
মন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামসহ দেশের অর্থনীতির চালচিত্র।
এসময় বেইজিং-এ নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচলক রুহুল আমিন সিদ্দিক, সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমদসহ দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
চট্রগ্রাম শহরে নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগোপোযুগী সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থার আধুনিকায়ন এই টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়াও এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেষে গড়ে ওঠা শহরের সাথে ডাউন টাউনকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা, চট্রগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করতে এই টানেল ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা-চট্রগ্রাম-কক্সবাজার এর মধ্যে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা গড়ে তুলতেও ভূমিকা রাখবে এই টানেল।
২০১৩ সালে টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা সম্পন্ন করে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।
দুই লেন বিশিষ্ট এই টানেল শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে বিস্তৃত হবে। টানেলের প্রবেশ পথ থাকবে নেভি কলেজের কাছে আর বহিগমন পথ সারকারখানার দিকে। ৩৪০০ মিটার দৈর্ঘের টানেলের পশ্চিম প্রান্তের আপ্রোচ ৭৪০ মিটার ও পূর্ব প্রান্তের আপ্রোচ ৪৯৫২ মিটার হবে।
উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদী বন্দরনগর চট্টগ্রামকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। এক ভাগে রয়েছে নগর ও বন্দর এবং অপর ভাগে রয়েছে ভারী শিল্প এলাকা। কর্ণফুলী নদীর উপর ইতোমধ্যে ৩ (তিন) টি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা বিরাজমান প্রচুর পরিমাণ যানবাহনের জন্য যথেষ্ট নয়।
নদীর মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমা একটি বড় সমস্যা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারীতার জন্য বড় হুমকি। এই পলি জমা সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর আর কোন সেতু নির্মাণ না করে এর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার চট্টগ্রাম জেলার দুই অংশকে সংযুক্ত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত টানেল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর নগরকে কর্ণফুলী নদীর অপর অংশের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করবে এবং পরোক্ষভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে সারা দেশের সাথে সংযুক্ত করবে।
বাংলাদেশ সময় ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এমএমকে/