ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গন্ধমুক্ত সাদা পাঙ্গাসের বাণিজ্যিক চাষ

আশরাফুল আলম, বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫
গন্ধমুক্ত সাদা পাঙ্গাসের বাণিজ্যিক চাষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): এক সময় গরীবের আমিষ নামে পরিচিত ছিল লাল মাংসল পাঙ্গাস মাছ। স্বল্পমূল্য আর অধিক প্রাপ্যতার কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কাছে প্রিয় ছিল এ মাছ।

কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি আর আঁশটে গন্ধের কারণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারায় পাঙ্গাস মাছের এ জাতটি।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে পাঙ্গাসের নতুন একটি প্রজাতির চাষ শুরু হয়েছে যা দেখতে সাদা রঙের। কম চর্বিযুক্ত ও গন্ধমুক্ত এ পাঙ্গাস মাছের চাষ বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। এটি দেশের বাজারের পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে পারবে বৈদেশিক বাণিজ্যে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদের তত্ত্বাবধানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে ভিয়েতনামের সাদা মাংসল (হোয়াইট মাসল) পাঙ্গাস মাছের।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার হোয়াইট মাসল পাঙ্গাসের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা কয়েকজন ছাত্রের মালিকানাধীন মৎস্য পোনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্বর্ণলতা অ্যাগ্রো ফিশারিজ। দেশে প্রথমবারের মতো তারা হোয়াইট মাংসল পাঙ্গাসের পোনার প্রজনন ও বিপণন শুরু করেছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাদির তরফদার।

২০১১ সালে তিনি ভিয়েতনাম থেকে মাছটির ব্রুড সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে তিন বছর ধরে লালন-পালনের পর ২০১৪ সালে হ্যাচারিতে প্রায় ২০ লাখ হোয়াইট মাসল পাঙ্গাসের পোনা দেয় ভিয়েতনামের সেই ব্রুড পাঙ্গাস মাছ। চলতি বছর সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে পাঙ্গাসের এ জাতটির পোনা উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছে স্বর্ণলতা অ্যাগ্রো ফিশারিজ।

হোয়াইট মাংসল পাঙ্গাসের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আব্দুল কাদির বলেন, এরা দ্রুত বর্ধনশীল ও গায়ে চর্বি থাকে অনেক কম। ফলে আঁশটে গন্ধ থাকে না। এর ফিড কনভার্সন রেশিও (এফসিআর) ১.৭ যা বর্তমান বাজারে পাওয়া থাই পাঙ্গাসের প্রায় অর্ধেক। ফলে খাবার অনেক কম লাগে। থাই পাঙ্গাস প্রতি দুই বছরে এক কেজি বৃদ্ধি হলেও প্রতি এক বছরে হোয়াইট মাসল পাঙ্গাসের ওজন প্রায় এক কেজি হয়। তাছাড়া, এদের অনেক বেশি ঘনত্বে (৪ শতকে ১ টন) চাষ করা যায়।

থাই পাঙ্গাসের অনুরূপ চাষ ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমেই এটির চাষ করা হয়। শুধু তাই নয়, এর রয়েছে প্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। পশ্চিমা বিশ্বে হোয়াইট মাসল পাঙ্গাসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর তাই হোয়াইট মাসল পাঙ্গাসের মাধ্যমে উন্মুক্ত হতে পারে বাংলাদেশের আরেকটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দ্বার।

নতুন জাতের এই পাঙ্গাসের বিষয়ে অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ বলেন, সাদা মাংসল হওয়ায় রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের বাজারেও এই পাঙ্গাসের ভাল চাহিদা থাকবে। থাই পাঙ্গাসের তুলনায় ফিড কনভার্সন রেশিও (এফসিআর) অনেক কম হওয়ায় একদিকে যেমন মাছের উৎপাদন খরচ অনেক কম হবে, অন্য দিকে মাছ চাষিরা অধিক লাভবান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৫     
এমজেড/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।