ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেটের সুফল পৌঁছায় না কৃষকের দোরগোড়ায়

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
বাজেটের সুফল পৌঁছায় না কৃষকের দোরগোড়ায়

ঢাকা: প্রায় ৪০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন আনসার আলী। কোনো বছর কীটনাশক ও নিম্নমানের বীজের জন্য ভালো ফসল পাননি।

আবার কোনো বছর ভালো দাম না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন। কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে হারিয়েছেন সব।
 
কিন্তু নাটোরের এ কৃষক কখনও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। প্রতিবছর বাজেট প্রস্তাবনা ও বাস্তবায়নে কিছুই আসে যায়নি তার। বাজেটে তার জন্য কত বরাদ্দ বা কোনো সুযোগ সুবিধা রয়েছে কিনা, তা জানেনও না তিনি।
 
শুধু আনসার আলী নন, তার মতো অনেক কৃষকেরই বাজেট সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ফলে তাদের বঞ্চিতই থাকতে হচ্ছে বাজেটের সুফল থেকে। এ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে প্রায় ৫০ জনের বেশি কৃষকের কথা হয়। সবার অবস্থাই আনসার আলীর মতো।
 
কৃষি অর্থনীতি ও বাজেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভর্তুকিসহ বাজেটকে কৃষিবান্ধব করতে না পারলে উৎপাদন খরচ, দ্রব্যের দাম ও কৃষকের ওপর প্রভাব পড়বে।
 
মঙ্গলবার (৩০ জুন) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকের কথা মাথায় রেখেই জাতীয় বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়। বাজেটের সুফল কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ মনে করছেন, উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ফসলের দাম না পেলে কৃষকরা হতাশ হয়ে অন্য পেশায় চলে যাবেন। তাই ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষককে উৎপাদনমুখী করে রাখতে হবে।

অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, তবে ভর্তুকি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কৃষকের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে। তাহলে তাদের মাঝে সচেতনতাও বাড়বে। এতে বাজেটের ফলও সবার কাছে পৌঁছে যাবে।
 
আর বাজেটে কৃষকরা একেবারেই উপেক্ষিত বলে দাবি করলেন কৃষি বিষয়ক সংগঠন ‘কৃষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকের উৎপাদনের ফসল নিয়ে আমরা বড় বড় কথা বলি। কিন্তু তাদের জন্য কিছু করি না। জাতীয় আয়ের শতকরা ১৭ ভাগ অবদান কৃষকের থাকলেও, তারা বাজেটে সব সময় উপেক্ষিত থাকেন।
 
কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও বাজেটে কৃষকের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষিতে কৃষককে রাখতে চাইলে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের পাশাপাশি ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
 
দিনাজপুর জেলার কৃষক রহমত আলীর কাছে বাজেট বিষয়ে জিজ্ঞস করতেই বলে ওঠেন, বাজেট তো বড়লোকের জন্য। আমরা বাজেট থেকে কী সুবিধা পাবো! বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়। সঠিক দাম না পেয়ে রাস্তায় ফেলে দিতে হয় কষ্টে উৎপাদিত ফসল। কই কখনও তো আমরা সরকারের কাছ থেকে কিছু পাই না।
 
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া এলাকার কৃষক আজাহার আলী দাবি করেন, বেশিরভাগ কৃষকই বাজেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। সরকার যদি নাই জানে আমরা কেমন রয়েছি, তাহলে কীভাবে আমাদের জন্য বরাদ্দ ও বাজেট করবে!
 
অভিযোগ রয়েছে, কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের জন্য বাজেটে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। মন্ত্রণালয় থেকে গতানুগতিক একটি বাজেটের প্রস্তবনা দেওয়া হয়। এর সুফল বিস্তৃতি হচ্ছে না।
 
সার্বিক বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ জানান, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, ভর্তুকির সঠিক বণ্টনসহ কৃষি বাজেট কৃষকবান্ধব হচ্ছে বলেই কৃষিতে এত সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষক এখান থেকে সুফল পাচ্ছেন না এটি বলা যাবে না।
 
এদিকে, জুন মাসের ০১ তারিখে জাতীয় বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে বাজেট প্রস্তবনা দেওয়া হয়েছিল, সেই বাজেটই মঙ্গলবার চূড়ান্তরূপে পাশ হয়েছে।
 
কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৬শ’ ৯৯ কোটি টাকা। যা গত বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৪শ’ ২১ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু ভর্ত‍ুকির পরিমাণ গত বছরের মতো চলতি অর্থ বছরেও নয় হাজার কোটি টাকাই রয়েছে।
 
কৃষি বাজেট বিশেষজ্ঞ ও কৃষকদের দাবি, জাতীয় মোট বাজেটে কৃষি ও কৃষকের জন্য কোন খাতে কত বরাদ্দ, কৃষি বাজেট থেকে কৃষকরা কীভাবে উপকার পেতে পারেন তা উন্মুক্ত করা হোক। তবেই এর সুফল পাবেন কৃষক।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
একে/এসএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।