ঢাকা: রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় বিজিএমইএ ও চীনের ওরিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানি যৌথভাবে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করতে যাচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পপার্ক।
কিন্তু এতে বিজিএমইএ’র বিনিয়োগ শূন্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১০ জুন ওরিয়েন্ট কোম্পানির সঙ্গে বিজিএমইএ’র (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি) গার্মেন্টস শিল্পপার্ক নির্মাণ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা (এমওইউ) সই হয়।
ওরিয়েন্ট কোম্পানি গার্মেন্টস শিল্পপার্ক নির্মাণে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়। মূলত বিজিএমইএ তাদের আর্থিক অক্ষমতার কথা জানালে ওরিয়েন্ট কোম্পানি পুরো টাকা প্রদানেই সম্মত হয়।
তবে সমঝোতা সইয়ের পর এক বছরে কেবলমাত্র ফ্রেমওয়ার্ক সই হয়েছে। তাছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র।
বিজিএমইএ থেকে জানা যায়, গার্মেন্টস শিল্পপার্কের সম্ভাবতা যাচাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এখনো মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়নি। জয়েন্ট কোম্পানি তৈরির কাজও এখনো সম্পন্ন হয়নি। জয়েন্ট কোম্পানি গঠন শেষ হলে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর অনুমোদনের জন্য। এক বছরে প্রকল্পের ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ পৃষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে মাত্র।
গার্মেন্টস শিল্পপার্কে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইপিটি) থেকে সব ধরনের সহায়তা থাকায় গার্মেন্টস শিল্পব্যবসায়ীরা শিল্পপার্কে যেতে চাইলেও নানা প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছেন তারা। এ বিষয়ে আশঙ্কার কথা জানালেন বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা কেউ সরাসরি কথা বলবেন না। যেহেতু, চীনের টাকায় গার্মেন্টস শিল্পপার্ক তৈরি হতে যাচ্ছে, সুতরাং এখানে আমাদের তো একটু ভয় থেকেই যাচ্ছে। ওরিয়েন্ট কোম্পানি মূলত এখানে কারখানা তৈরি করে তা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেবে। যাকে ইচ্ছা তাকে কারখানা ভাড়া দেবে। এ ক্ষেত্রে যেসব কারখানায় চীনের বিনিয়োগ আছে, তারাই প্রাধান্য পাবে। বিজিএমইএ’র তেমন কোনো কর্তৃত্ব থাকছেন না এখানে।
তিনি বলেন, ভাড়ার টাকার মাধ্যমে ১০ বছরে তাদের বিনিয়োগ ও মুনাফা উঠিয়ে নেবে কোম্পানিটি।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম বাংলানিউজকে বলেন, গার্মেন্টস শিল্পপার্কে আমাদের বিনিয়োগ শূন্য, এটা ঠিক। তবে কাজে ধীরগতি ও ভাড়ার বিষয়টি ঠিক নয়।
তিনি বলেন, এখানে যারা কারখানা সরিয়ে নিয়ে আসবেন, তারা প্রতি মাসে একটা ইন্সটলমেন্ট দেবেন। আর যখন ইন্সটলমেন্টে কারখানার নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ হবে, তখন ওরিয়েন্ট কারখানা সেই গার্মেন্টস কোম্পানির নামে লিখে দেবে। আর প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দ দেওয়া হবে গার্মেন্টস শিল্পপার্কে।
গত এক বছরের কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই তো ফ্রেমওয়ার্ক সই হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, গার্মেন্টস শিল্পপার্কের প্রাথমিক কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে।
প্রসঙ্গত, মুন্সীগঞ্জের বাউশিয়ায় ৪৯২ একর জমির ওপর গার্মেন্টস শিল্পপার্ক তৈরি হতে যাচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। শিল্পপার্কে তিনশ থেকে পাঁচশটি কারখানার কাজ চলবে। প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করবেন এই শিল্পপার্কে।
বাংলাদেশে এটি চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। কারখানার পাশাপাশি শিল্পপার্কে পাঁচতারকা হোটেল, শ্রমিকদের বসবাসের সুবিধা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সব ধরনের সুবিধা থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
ইউএম/এবি