ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন (ফাইল ফটো)

বেনাপোল (যশোর): বেনাপোল কাস্টমস হাউজে গত তিনটি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতির পর ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে তা পূরণ হয়েছে।

এক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিজেদের সফলতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগে সবকিছু করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন।



কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, জোর করে আমদানি পণ্যের উপর অবৈধ ভাবে শুল্ককর বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। ফলে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে বেড়েছে সীমান্ত পথে চোরাচালান।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল কাস্টম হাউসে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৪৭২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৫.৬১ কোটি টাকা বেশি।  

অন্যদিকে এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সে সময় আদায় হয় ২ হাজার ৪৮৫.২৭ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৬২০ টাকা। আদায় হয় ২২০৩.৩২ টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৪২৫ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে আদায় হয় ২৩১২.৪৭ টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ভারত থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৩২টি ভারতীয় ট্রাকে আমদানি হয় ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন পণ্য। এসময় রাজস্ব পরিশোধ করে বন্দর থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ৭৭৬টি বাংলাদেশি ট্রাকে পণ্য খালাস হয় ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮১ মে. টন।

২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৯৫ হাজার ৬৮৪টি ভারতীয় ট্রাকে পণ্য আমদানি হয় ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯ মে. টন। এসময় বাংলাদেশি ১ লাখ ২২ হাজার ৯৪১টি  ট্রাকে পণ্য খালাস হয় ১২ লাখ ৬১ হাজার ২৩৮ মে. টন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আমদানি পণ্যের উপর অনিয়ম করে শুল্ককর বাড়িয়ে চলেছেন। এতে সরকারের কোষাগারে অতিরিক্ত অর্থ জমা হলেও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বেকায়দায়। ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে সীমান্ত পথে চোরাচালান বেড়েছে।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি ও রফতানি কারক প্রতিষ্ঠান ডলপিন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী ইদ্রিস আলী বলেন, প্রতি কেজি ভারতীয় থান কাপড় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা ০২ ডলার ৫০ সেন্ট মূল্যে খালাস দিচ্ছেন। কিন্তু একই পণ্য আবার মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করলে ২ ডলার ১০ সেন্টে খালাস হচ্ছে। স্যুটিং কাপড় বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতি কেজি ৩ ডলারে, আর মংলা বন্দরে ২ ডলার ৩০ সেন্টে খালাস হচ্ছে। একারণে তিনি এখন বেনাপোল বন্দর ছেড়ে মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করছেন।

বেনাপোল ল্যান্ড পোর্ট আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শুধুমাত্র বেনাপোল বন্দরে পণ্যের মূল্য বৃদ্দি করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে যা বাংলাদেশের কোনো কাস্টমস হাউসে বলবৎ নেই। বেনাপোল বন্দরের পার্শ্ববর্তী ভোমরা বন্দরে কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চাল একশ টন ঘোষণা দিয়ে ১৩০ টন বেশি আমদানি করে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।

ভোমার বন্দরে শুধুমাত্র ফল আমদানি করে গত বছর সরকারের কয়েকশ’ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। কাস্টমসের পক্ষ থেকে মামলা করে সেই ফাঁকি দেয়া অর্থ আদায় করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার রেজাউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শুল্কায়নে স্বচ্ছতা ফিরে আসায় এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এসময় বেশি মূল্যে পণ্য খালাসের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, যা কিছু হচ্ছে সবই আইনের মধ্যে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
এসএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।