ঢাকা: মাত্র ১০ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীকর্মী পাঠানো হচ্ছে সৌদি আরবে। আর স্বল্প দিনের এই প্রশিক্ষণেই তারা দক্ষ হয়ে উঠছেন বলে দাবি করছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
অথচ কিছুদিন আগেও সিদ্ধান্ত হয় ৪২ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ শেষেই নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হবে। এর আগে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ চালু ছিল। তবে সেখানে আবাসিক ব্যবস্থা ছিল না।
গ্রাম থেকে আসা এসব নারীদের অধিকাংশই আগে কখনও ঢাকাতেই আসেননি। অনেকের বাড়িতে আজো বিদুৎ যায়নি। এসব নারীরা কিভাবে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার মাত্র ১০ দিনে শিখবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ১০ দিনের প্রশিক্ষণের এই ব্যবস্থা ‘স্বল্পকালীন’ বলছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, নারীকর্মী চেয়ে সৌদি আরবের দ্রুত তাগাদার প্রেক্ষিতেই ট্রেনিংয়ের সময়সূচি কমিয়ে আনা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান শাখার যুগ্মসচিব (প্রশিক্ষণ) নারায়ণ চন্দ্র বর্মা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণের সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়। তবে মানের খুব বেশি তফাত নেই। কারণ, পুরোপুরি আবাসিক এই ১০ দিনের প্রশিক্ষণে ২১ দিনের সিলেবাসটাই শেখানো হয়। ’
তবে কিছুদিন পর আবারও প্রায় একমাসের আবাসিক প্রশিক্ষণে ফেরত যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাম থেকে আসা নারীদের পক্ষে দশ দিনে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে যেমন ওঠা কষ্টকর, তেমনি এই অল্প কয়েকদিনে আরবি ভাষা শেখা অসাধ্য। ভাষা না শিখে যাওয়ার কারণে তারা সাধারণ যোগাযোগটুকুও করতে পারবেন না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের একজন অভিবাসন গবেষক বাংলানিউজকে বলেন, সৌদি আরবে বাসায় বাসায় কাজ করা আমাদের গ্রামের বাড়িতে ছাই দিয়ে বাসন মাজার মতো নয়। সেখানে নানা ধরনের উন্নত আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে নিত্যদিন কাজ করতে হবে। সেসব সম্পর্কে কোনোভাবেই দশদিনের প্রশিক্ষণে ধারণা আনা সম্ভব নয়। তাছাড়া দুদেশের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় বাধা ভাষা। ১০ দিনে কোনোভাবেই গ্রামের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীরা আরবি ভাষা আয়ত্বে আনতে পারবেন না।
‘ধরে নিচ্ছি দ্রুত কর্মী পাঠাতে প্রশিক্ষণে এক ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে ছাড় নারীর ক্ষেত্রে কেন? যেখানে নারীরাই বেশি অরক্ষিত, সেখানে তাদের কেন গিনিপিগ করা হচ্ছে?’ প্রশ্ন করেন ওই গবেষক।
‘অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর আরেক অর্থ তাদের নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেওয়া বৈ কিছু নয়’- যোগ করেন এই ব্র্যাক কর্মকর্তা।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বাংলাদেশিরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান, তারা যেকোনো দেশের মানুষের তুলনায় অত্যন্ত দ্রুত অন্যভাষা শিখে নিতে পারে। এটা আমাদের পজিটিভ দিক। তাই তারা সামান্য আরবি শিখে গেলেও সেখানে গিয়ে অল্প দিনের মধ্যে ভাষা শিখে নেবে। ’
১০ দিনের প্রশিক্ষণেও তাই নারীকর্মীরা ‘দক্ষ’ হয়ে উঠছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘দ্রুততার খাতিরে ১০ দিন প্রশিক্ষণ মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা চলতে পারে না। ’
এদিকে প্রশিক্ষণে তাড়াহুড়া করেও রমজানের আগে দেশটিতে প্রতিশ্রুত সংখ্যক নারী কর্মী পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। রমজানের আগে যেখানে ২০ হাজার কর্মী পাঠানোর কথা ছিল সেখানে এ পর্যন্ত তিনশ’ শ্রমিকও যেতে পারেনি। তবে তিন হাজারের মত ভিসায় স্ট্যাম্পিং করা হয়েছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, দেশটিতে যেতে পাসপোর্ট করা ছাড়া বাকি সব খরচ দেবে সৌদি নিয়োগ কর্তা। তারপরেও দেশটিতে যেতে সাড়া নেই নারীদের। কর্মী সংগ্রহে নাম নিবন্ধনের বিজ্ঞাপন দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই আহবানে সাড়া দেয় মাত্র তিন হাজার নারী। এরপর জেলায় জেলায় অভিবাসন মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানেও আশানুরূপ ফল আসেনি।
এদিকে একশ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও কর্মী সংগ্রহের কথা বিবেচনা করে নারীকর্মী সংগ্রহ, বাছাই ও পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ১১৫টি রিত্রুটিং এজেন্সিকে। এসব এজেন্সি সর্বোচ্চ দুইশ কর্মী পাঠাতে পারবে। কিন্তু তাদের কেউই এখন পর্যন্ত কোটা পূরণ করতে পারেনি।
২০০৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বৃহত্তম এই শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। নানা কূটনৈতিক তৎপরতায় দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর পর গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার কথা জানায় সৌদি সরকার।
এই মুহূর্তে গৃহস্থালি কাজের জন্য শুধু নারীকর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। তবে নারীকর্মীদের সৌদি আরবে যেতে কিছুটা বিলম্ব হবে। কারণ, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নারীকর্মী পাঠানোর আগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৫
জেপি/এমজেএফ