ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পে-রোল ট্যাক্স দেয় না ৮০ হাজার প্রতিষ্ঠান!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
পে-রোল ট্যাক্স দেয় না ৮০ হাজার প্রতিষ্ঠান!

ঢাকা: দেশের ‍অধিকাংশ করপোরেট প্রতিষ্ঠান পে-রোল ট্যাক্স (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনের ওপর কর) আওতার বাইরে রয়েছে। প্রতিবছর নতুন করপোরেট প্রতিষ্ঠান যোগ হলেও ‘সঠিক তদারকির’ অভাবে পে-রোল ট্যাক্সের আওতায় আসে না।

ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এ খাতে রাজস্ব আদায় না হওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা ও কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, দেশে গত দশকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ায় গড়ে উঠেছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমাসহ বিপুল সংখ্যক করপোরেট প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি পে-রোল ট্যাক্স আদায়।

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) তথ্যমতে, দেশে নিবন্ধিত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৪১১টি। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ১ হাজার ৭২৭ ও বৈদেশিক কোম্পানির সংখ্যা ১৬২টি। যদিও এর বাইরে অনিবন্ধিত কয়েক করপোরেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আরজেএসসি নিবন্ধিত ১ লাখ ৪ হাজার ৩শ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠান পে-রোল ট্যাক্স দেয় বলে এনবিআর সূত্রে জানা যায়।

নিবন্ধিত ৭৪ হাজার ৩শ প্রতিষ্ঠান কর আওতার বাইরে রয়েছে। ৩২ হাজারের বাইরে বাকি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা এনবিআর’র কাছে নেই বলে সূত্র জানায়।

জরিপ আর তদারকি না থাকায় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা কয়েক লাখ অনিবন্ধিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারছে না আরজেএসসি।

আরজেএসসি ও এনবিআর’র মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে নিবন্ধিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানকেও করের আওতায় আনতে পারছে না রাজস্ব আদায়কারী রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা।

মাঠ জরিপ আর তদারকি না থাকায় দেশে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, প্রতিবছর নতুন কত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান যোগ হচ্ছে তার কোনো তথ্য নেই এনবিআর’র কাছে।

সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে কর আদায়, জরিপ ও তদারকির জন্য রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আদায়কারী এ সংস্থার নেই কোনো আলাদা বিভাগ।

সূত্র জানায়, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তি আর আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে কর ফাঁকি উৎঘাটন ও মনিটরিং দুরূহ ব্যাপার।

করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি ও মনিটরিং করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১২ সালে ‘কম্পিউটার ফরেনসিক ল্যাব’ স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, সুইডেন, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে পে-রোল ট্যাক্স আদায় করা হয়। বাংলাদেশে এ খাত অপার সম্ভাবনাময় হলেও আদায় হয় মাত্র ২ শতাংশ। সঠিক মনিটরিং আর আইনের প্রয়োগ হলে আদায় হার বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

একজন কর কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, এনবিআর’র নির্দেশনা অনুসারে কর অঞ্চলভিত্তিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জরিপ ও তালিকা করা হচ্ছে। জরিপে পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে ট্যাক্স (পে-রোল ট্যাক্স) হওয়ার কথা তা দিচ্ছে কিনা তাও উল্লেখ থাকবে।

এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, আইনের আওতায় কমিশনাররা খুব সহজে করপোরেট প্রতিষ্ঠান শনাক্ত ও জরিপ করতে পারে।

করপোরেট প্রতিষ্ঠান মনিটরিং হয় না এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন সাবেক কাস্টমস কমিশনার শাহাবুদ্দিন নাগরী।

তালিকা থেকে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আরজেএসসি ও এনবিআর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

সম্ভাবনাময় এ খাতের জন্য আলাদা একটি বিভাগ চালু বা একজন কমিশনারকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দিলে এ খাত থেকে বিপুল রাজস্ব আদায় সম্ভব বলে মত দেন তিনি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসার এইচ মনসুর বলেন, আইন অনুসারে এনবিআর শুধু প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করবে।

প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত ও তাদের পে-রোল ট্যাক্সের আওতায় আনা এনবিআর দায়িত্ব। কিন্তু সঠিকভাবে মনিটরিং হয় না বলে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
আরইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।