ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সমস্যা-জর্জর নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরী

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
সমস্যা-জর্জর নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরী ছবি: শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে চলছে কারণ ছাড়াই চাকরি থেকে শ্রমিক-ছাঁটাই। অনেক কারখানায় দেওয়া হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি।

রয়েছে নিয়মিত বেতন না পাওয়ার অভিযোগ।

অন্যদিকে কারখানা-মালিকরা ভুগছেন গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যাসহ নানা সমস্যায়। এতে করে কারখানাগুলোতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি কারখানা-মালিকদের।

এছাড়া রয়েছে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, ব্যাংকঋণে উচ্চ সুদের হার, মানসম্মত কাঁচামালের অপ্রতুলতা, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ভ্যাটনীতির বিরূপ প্রভাব, উদ্যোক্তাদের অসচেতনতা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব তথা অব্যবস্থাপনা।

কয়েকজন কারখানা-মালিক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  প্লট ববাদ্দ পাওয়ার পরও অনেক উদ্যোক্তা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারেননি মূলধন ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে।

তারা জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। কিছুকিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে কাজ চালাচ্ছে। তবে সব থেক বড় সমস্যাটা হচ্ছে গ্যাসের ক্ষেত্রে। বাইরে থেকে সিলিন্ডার-গ্যাস এনেও অনেকে উৎপাদন ঠিক  রাখতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সরেজমিন নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা দেখা গেছে। বাইরে থেকে সিলিন্ডার-গ্যাস সংগ্রহ করে অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজ চালানোর দৃশ্য বাংলানিউজের ক্যামেরাই ধরা পড়েছে। বিসিক শিল্পনগরীর ভিতরে বেশ কিছু স্থান খালি পড়ে থাকার চিত্রও পাওয়া গেছে।   এছাড়া বেশ কিছু স্থানে ভবন নির্মাণাধীন দেখা গেছে।

ওয়াসিনো নিটওয়ার'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। অনেক কারখানা নিয়মিত গ্যাস পায় না। কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান হলে বিসিক এলাকাতে উৎপাদন কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বেড়ে যেত। ’

তিনি বলেন, ‘শিল্পনগরীর মধ্যে বিসিকের অফিস থাকলে তাদের মাধ্যমে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। উল্টো বিসিকের কর্মকর্তারা আমাদের নানাভাবে হয়রানি করেন। শিল্পনগরীর মধ্যে বিসিকের পানির মোটর থাকলেও তা বছরের ৮ মাসই অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। এর ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে পানির ব্যবস্থা করতে হয়।

এছাড়া রাস্তা ও ড্রেন পরিষ্কার করার দায়িত্ব বিসিকের হলেও তারা এ দিকটায় কোনো নজর দেয় না। এজন্য আমাদেরকে নিজেদের অর্থ খরচ করে রাস্তা ও ড্রেন পরিষ্কার রাখতে হয়। ’

বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিসিকের ভিতরে অবস্থিত প্রতিটি কারখানা এনায়েত নগর ইউনিয়নকে প্রতি স্কয়ার ফিটের উপর ৫০ পয়সা করে ট্যাক্স দেয়। এরপরও বিসিক কর্তৃপক্ষ বছরের একমাসের ভাড়া কারখানা মালিকদের কাছ থেকে নিয়ে যায়।   এভাবে বছরে কোটি টাকার উপরে প্লট মালিকদের কাছ থেকে আদায় করে বিসিক। অথচ শিল্পনগরীর ভিতরে কোনো কাজেই পাওয়া যায় না তাদের। এমনকি কারখানায় কোনো গোলযোগ বাধলেও তাদের পাওয়া যায় না। শিল্পপুলিশরা গেটের কাছে বিসিক অফিসের সামনে বসে থাকেন। ’

কারখানা-মালিকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যোগাযোগ করলে শিল্প নগরী কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা তো জাতীয় সমস্যা। গ্যাসের লাইন আমরা করে দিয়েছি। গ্যাস-অফিস ও কারখানা-মালিকরা নিজেরা গ্যাসের সমস্যা সমাধান করবেন। তাছাড়া আমাদের কাছে কেউ গ্যাসের সমস্যার অভিযোগ করেনি। যদি কেউ অভিযোগ করে তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। ’

রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিসিকের বাজেট কম। সেজন্য মালিকরা নিজস্ব টাকা দিয়ে রাস্তা ও ড্রেন পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করছেন। তবে এ নিয়ে তো কেউ কখনো আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। ’

প্লট-মালিকদের কাছ থেকে বছরের এক মাসের ভাড়া নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নিই না। যারা নিজেদের ভবনে অন্যদের ভাড়া দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে বছরে একমাসের ভাড়া নিই। বিসিক শিল্পনগরীর ভিতরে ৭১৪টি প্লট আছে। এগুলোর মধ্যে ৬০টির মতো প্লটের মালিকরা অন্যদের কাছে ভবন ভাড়া দিয়েছেন। এদের কাছ থেকে একমাসের ভাড়া আদায় করে আমরা তা সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে দিই। ’

প্লট খালি পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫৮ দশমিক ৫২ একর জমির মধ্যে ৩ একরের মতো জমি খালি পড়ে আছে। এগুলোতে ভবন নির্মানের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। এর বাইরে যেসব জমি খালি পড়ে আছে তা ব্যক্তিমালিকানাধীন অথবা পুলিশের জন্য বরাদ্দ রাখা। ’

শ্রমিকদের কষ্ট
এদিকে নিয়মিত বেতন-বোনাস না পাওয়া ও সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি না পাওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক কারখানাশ্রমিক। এছাড়া বিনা কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের অভিযোগও করেন তারা। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলোতে এ সমস্যা বেশি।

এ বিষয়ে বিসিক শিল্প নগরির পাশেই অবস্থিত ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফকির নূর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সায়েম টেক্সটাইল, কালার টাচ, জননী, মোল্লা, সোহাগ, অটোমেশিন টেক্সটাইলসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি দেয় না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। আমরা এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। ’

তিনি বলেন, ‘অনেক কারখানা-মালিক শ্রমিকদের বিনা কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই করছেন। তাদেরকে চাকরির বিধান অনুযায়ী ন্যায্য পাওনাটুকু পর্যন্ত বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এজন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। কিন্তু পুলিশ মালিকদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে মালিকরা সন্ত্রাসী পাঠিয়ে শ্রমিকদের হুমকি দিচ্ছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।