রংপুর: রংপুরে কেমিক্যাল দেওয়া মুড়ির ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে তৈরি মুড়ি ও এর ব্যবসা। ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন।
সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে এখানকার হাতে তৈরি মুড়ির ব্যবসা। আর এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রংপুর নগরীর পালপাড়া, বৈরাঘী পাড়া, মুলাঠোল, মাছুয়াপাড়াসহ রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বুজরুক বাগবাড় মন্ডলপাড়া গ্রামের হাতে তৈরি মুড়ির চাহিদা প্রচুর।
ব্রিটিশ আমল থেকেই এসব এলাকার প্রতিটি পরিবারই মুড়ি তৈরির ব্যবসায় জড়িত। এখানকার তৈরি ভেজালমুক্ত মুড়ি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় যায়।
এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো মুড়ির সেই ঐতিহ্য আর জৌলুস নেই। মুড়ি তৈরির সরঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়া ও ভেজাল না দেওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়েছেন।
অনেকেই পেশা বদল করে এখন দিনমজুর। কেউবা আবার রিকশা চালান। পুঁজি হারিয়ে অনেকে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন ঢাকায়।
নগরীর পালপাড়া এলাকার রামচন্দ্র রায় (৩৫) জানান, জন্মের পর থেকে দেখি আমার পিতামাতাসহ আশেপাশের সবাই মুড়ি তৈরি করেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এ ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দিনরাত খাটুনি কিন্তু লাভ নেই।
তিনি বলেন, এখন পাইকারিভাবে এক মণ মুড়ি বিক্রি হয় ২২শ’ থেকে ২৫শ’ টাকায়। কিন্তু গায়ে-গতরে খেটে লাভ হয় মাত্র ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।
জিনিসের বেড়ে যাওয়ায় এক মণ মুড়ি তৈরি করতে খরচ হয় আঠারোশো টাকা পর্যন্ত। একসময় এ পাড়ার সবাই মুড়ি তৈরি করতেন। এখন ১শ’ ৪০ থেকে ১শ’ ৫০টি পরিবার মুড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত বলে তিনি জানান।
একই এলাকার নাগবাবু জানান, মুড়ির উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় আগের মতো মুড়ি ব্যবসা থেকে লাভ হয় না। তাছাড়া হাতে বানিয়ে পাইকারদের মুড়ি দিতে সময় লাগে দুই দিন। অন্যদিকে, যারা মেশিন দিয়ে মুড়ি তৈরি করেন, তারা অল্প সময়েই অনেক ডেলিভারি দিতে পারেন। এজন্য পাইকাররা আমাদের কাছে আসতে চান না। ফলে আমরা ব্যবসায় মার খাচ্ছি।
মুড়ি ব্যবসায়ী রবি দাশ বলেন, পেটের দায়ে বাপ-দাদার আদি ব্যবসাকে ধরে রেখেছি। কিন্তু কতদিন ধরে রাখতে পারবো জানি না। অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একসময় পালপাড়া মুড়িপাড়া নামে পরিচিত ছিল। এখানে ভেজালমুক্ত মুড়ি তৈরি হতো। কিন্তু উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও মেশিনে তৈরি ভেজাল মুড়ির কাছে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যদি মুড়ি ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে ট্রেনিং দেওয়া যায়, তাহলে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সম্মৃদ্ধ হবে এ অঞ্চল।
স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িপাড়ায় মুড়ি তৈরি কমে যাওয়ায়, রংপুরের প্রতিটি হাট-বাজারে এখন ভেজাল মুড়িতে সয়লাব।
এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মেশিনে ডায়িং, হাইড্রোজ, অ্যামোনিয়া পাউডার ও ইউরিয়া সার মিশিয়ে তৈরি করছে ভেজাল মুড়ি। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
এসএস