ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বর্তমানে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৩শ মার্কিন ডলার। এটাকে পরবর্তীতে আমরা ৪ হাজার ১০০ ডলারে নিয়ে যাবো।
আর ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১২ হাজার ২৮৫ মার্কিন ডলার।
‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১২-১৩ প্রগতির পথে’র সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশের সময় মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
রোববার দুপুরে নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
মুস্তফা কামাল বলেন, ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ২৮৫ ডলারে উন্নীত করা আমাদের নতুন রূপকল্প। এটা হলে আমরা উন্নত বিশ্বের জায়গায় পৌঁছাবো। দেশের অর্থনীতি সহনশীল অবস্থায় আছে। আমরা এটাকে অর্জন করতে পারবো।
মন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, যেভাবে আমরা এগুচ্ছি, এতে করে নির্ধারিত সময়ের আগেই এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করতে পারবো। ২০২৫ সালে শতকরা শতভাগ মানুষ প্রাইমারি শিক্ষা গ্রহণ করবে। এ সময় এমন কোনো কৃষককে মাঠে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা ইংলিশে (ইংরেজি) কথা বলতে পারবে না। এমন কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালককে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা ইংলিশে কথা বলতে পারবে না।
পরিকল্পনার জন্য সঠিক তথ্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সঠিক তথ্য ছাড়া কোনো দেশে সঠিক পরিকল্পনা করা যায় না। বিবিএস’র (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) কর্মপরিকল্পনা ও সঠিক তথ্য ল্যান্ডমার্ক হিসেবে কাজ করে।
প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিনদিন সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
২০২১ সালের আগেই আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। বিশ্বব্যাংকসহ সবাই আমাদের এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ৯৭ শতাংশ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলে ঝরেপড়া কমে গেছে। মাতৃমৃত্যুর হারও কমে গেছে বলে জানান মুস্তফা কামাল।
দেশের ৪২ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির
উপস্থাপিত ফলাফলে দেখানো হয়, দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪২ শতাংশ খর্বাকৃতির। এ শিশুদের অর্ধেকের বেশি (৫২ দশমিক ৮ শতাংশ) দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। অন্যদিকে, ধনী সম্প্রদায়ের শিশুদের মাত্র ২৭ শতাংশ খর্বাকৃতির। পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলায় খর্বাকৃতির হার বেশি। তবে সব থেকে কম খর্বাকৃতির শিশু রয়েছে, মেহেরপুরে এবং বেশি রয়েছে নেত্রকোনা জেলায়।
৭৭ শতাংশ উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাভোগী
পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল ক্লাস্টার সার্ভের বরাত দিয়ে বলেন, দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষ উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা ভোগ করছেন এবং চার শতাংশ মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করেন।
জরিপে বলা হয়, দেশে বাল্য বিবাহের প্রচলন এখনও উঁচুমাত্রায়। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ, যাদের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়সের আগেই এবং ১৮ দশমিক ১ শতাংশের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সের আগে। ২০-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে ৩ জনের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছিল বলে জানানো হয়। আবার প্রতি চারজনের এক জনের বিয়ে হয়ে যায় ১৫ বছর বয়সের আগে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউনিসেফ এই জরিপ ফলাফল প্রকাশ করে। দেশের ৬৪টি জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপে বলা হয়, সন্তান জন্মদানের সময় ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে একজন দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত থাকেন। সেখানে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে এর হার মাত্র ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ধনী পরিবারে এই হার ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ। সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি পূর্বাঞ্চলের তুলনায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে অনেক বেশি।
জরিপ ফলাফল উপস্থাপনের সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিবিএস সচিব কানিজ ফাতেমা, বিবিএস’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ ও ইউনিসেফ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
এমআইএস/এবি