ঢাকা: বিশিষ্ট শিল্পপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) আমজাদ খান চৌধুরীর ইন্তেকাল দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তার অবদান অনুস্বীকার্য।
বাংলাদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের পথিকৃৎ, অন্যতম প্রধান শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুর পর শোকবাণীতে এসব কথাই বলা হয়েছে।
শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এফবিসিসআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ প্রমুখ।
বুধবার(৮ জুলাই’২০১৫) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় ডিউক মেডিকেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমজাদ খান চৌধুরী।
তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ ডায়াবেটিক ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়ে ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী তিনি রেখে গেছেন তিনি।
শারীরিক অসুস্থতার জন্যে বিগত একমাস যাবৎ যুক্তরাষ্ট্রের এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আমজাদ খান চৌধুরী। আমজাদ খান চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৯ সালের ১০ নভেম্বর নাটোর জেলার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে। তার পিতা মরহুম আলী কাশেম খান চৌধুরী, মাতা মরহুমা আমাতুর রহমান। তার চার সন্তান হলেন- আজার খান চৌধুরী, সেরা হক, আহসান খান চৌধুরী ও উজমা চৌধুরী।
ছোট ছেলে ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী তার বাবার মৃত্যুতে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
বাবার মৃতদেহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আনার পর ঢাকায় সামরিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে ঠিক কবে মরদেহ ঢাকায় আসবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি।
আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকবাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে আমজাদ খান চৌধুরীর পদক্ষেপ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব বলেন, আমজাদ খান চৌধুরী সব সময় নতুন ব্যবসায়ীদের প্রতি সহায়ক হয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেন। ব্যবসায়ী সমাজ নানাভাবে তার কাছে সহায়তা পেয়েছে। তিনি অভিভাবকের মতো ছিলেন।
এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন এই আমজাদ খান চৌধুরী। ঢাকার নবকুমার ইন্সস্টিটিউট থেকে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ান স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন।
কর্মজীবনে তিনি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহন করেন।
বহুগুণে গুণান্বিত আমজাদ খান চৌধুরী বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যিক সংগঠন যেমন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিইসি), ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল), বাংলাদেশ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি, পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া তিনি রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা), আন্ডারপ্রিভিলেজড চিলড্রেন্স এডুকেশন প্রোগ্রাম (ইউসেপ) প্রভৃতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
দেশের অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি দেশের বেসরকারি সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের বহুমূখী ব্যবহার এবং এ শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে তিনি অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমধিক পরিচিত। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও তার অবদান অনুকরণীয়।
বাংলাদেশ সময় ১০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এমএমকে/
** আমজাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
** আমজাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে খালেদা জিয়ার শোক
** প্রাণ-আরএফএল স্বপ্নদ্রষ্টা আমজাদ খান চৌধুরী আর নেই