ঢাকা: শুক্রবার এলেই কাঁচাপণ্যের বিক্রেতারা বেপরোয়া হয়ে যান। নিজেদের ইচ্ছে মতো প্রতিটি পণ্যের দাম ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন।
ছুটির দিন হওয়ায় কাঁচা বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বেশি দাম নেয়া হয় বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি বৃদ্ধি করলেই কেবল বিক্রেতাদের এহেন সিন্ডিকেট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
গত দুই মাস ধরে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ওঠে আসে এসব তথ্য।
জুন মাসের ৪ তারিখ বৃহস্পতিবার কেজি প্রতি টমেটো বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। পরেরদিন শুক্রবার তা ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আবার পরের দিন শনিবার ওই দাম কমে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
এছাড়া একদিনের ব্যবধানে শসা’র দাম ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া অন্যান্য কাঁচাপণ্যও বিক্রি হয়েছে বেশি দামে।
অথচ একই দিন দিবাগত রাতে পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় অন্যান্য দিনের মতোই পাইকারি দরে কাঁচাপণ্য বিক্রি হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারেও বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয় বলে জানালেন পাইকারি কাঁচামরিচ বিক্রেতা শফিকুল।
প্রায় প্রতিদিনই কাঁচা বাজার করেন সরকারি চাকরিজীবী এইচ এম নিশাদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার কারণ ছাড়াই প্রায় প্রতিটি কাঁচাপণ্যের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ক্রেতাদের সমাগম বেশি হলে দাম আরও বাড়ে! এক ধরণের জিম্মি করেই তারা এভাবে দাম বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ এ ক্রেতার।
শুক্রবার এলে কাঁচাবাজার গরম হয়ে যায় এ কথা খোদ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাও স্বীকার করলেন। আলাপকালে মো. মমতাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এক্ষেত্রে ক্রেতাদের একটু দাম যাচাই করে কিনতে হবে। বিক্রেতারা সব সময়ই সুযোগ সন্ধানী। প্রতি শুক্রবারেই তারা এরকম আচরণ করে।
গত বৃহস্পতিবারের (২ জুলাই) চেয়ে শুক্রবার (৩ জুলাই) প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেশি বলে জানালেন বাড্ডা কাঁচা বাজারের বিক্রেতা ইমরান হোসেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, অন্যান্যের দিনের চেয়ে ক্রেতারা বেশি আসেন। ভিড় সামলাতেও হিমশিম খেতে হয়। ফলে একটু দাম বেশি নেয়া হয়।
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মীর ফয়েজ দাবি করলেন, শুক্রবারে বেশি সতেজ ও ভালো কাঁচাপণ্য রাখা হয়। এছাড়া বেশি বিক্রি হয় বলে মাল কমেও যায়। সবকিছু ভেবেচিন্তেই দাম একটু বেশিই রাখা হয়। এছাড়া অন্যান্যে দিন কম বিক্রি হয়। ফলে যা আয়ের চিন্তা শুক্রবারকে ঘিরেই।
ক্রেতাদের দাবি জবাবদিহিতা থাকলে বিক্রেতারা ক্রেতাদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারতো না।
বনানী কাঁচাবাজারে কথা হয় ক্রেতা শাহরিয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে শুক্রবারে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। যদি সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হতো তাহলে কিন্তু এ রকম ঘটনা ঘটতো না। প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা থাকার কথা। কিন্তু কোনো দোকানে নেই। থাকলেও সেই অনুযায়ী দাম নেয়া হয় না।
বিভিন্নভাবে ক্রেতারা বাজারে হয়রানির শিকার হন বলেও জানান কাঁচাবাজারের নিয়মিত এ ক্রেতা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
একে/আরআই