ঢাকা: ক’দিন পরই ঈদ। উপরতলা থেকে নিচতলা, প্রতিটি ঘরে ঘরেই চলছে ঈদের প্রস্তুতি।
বেতনের সঙ্গে বোনাস হলো। আনন্দচিত্তে মায়নুল ছুটলেন এটিএম বুথে। চোখে ভাসছে তার স্বজনদের উচ্ছল হাসি। তবে বোনাস প্রাপ্তির আনন্দ তার পানি হয়ে গেলো এটিএম বুথের নেটওয়ার্ক সমস্যায়। কিন্তু মায়নুলের জন্য যে আরও বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছিল। কিছু সময় পর আবার তিনি চেষ্টা করলেন টাকা উত্তোলনের। এবার জানানো হচ্ছে তার অ্যাকাউন্টে বোনাসের সেই অংক নেই, অথচ আগেরবার নেটওয়ার্ক সমস্যায় কোনো টাকা-ই উত্তোলন করতে পারেননি তিনি।
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মায়নুলের! তৎক্ষণাৎ ফোন করেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে। কয়েক দফায় ফোন করা হলেও মায়নুলকে জানানো হয়, এটিএম বুথ জটিলতায় তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন দেখানো হয়েছে, তবে সেটা ফেরত দেওয়া হবে, কিন্তু দেড় মাস পর!
ব্যাংক কর্তাদের এ ধরনের দায়সারা বক্তব্যে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মায়নুল! গুনে গুনে ৮-৯ দিন বাকি ঈদের। এই মুহূর্তে তিনি কী বলবেন বাবাকে? আদরের বোন ফোন করলে তাকে-ই-বা কী বলবেন?
কাঁপা কাঁপা হাতে মায়নুল ফোন করেন বাড়িতে। বাবা আর বোনের সঙ্গে বলেন ব্যাংক কর্তাদের হাতে তৈরি দুঃখজনক ‘অদৃষ্টে’র কথা। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে মায়নুলকে সান্ত্বনা দেন বাবা। বোন বলেন, ‘ভাইয়া, তুমি টেনশন কইরো না, আমরা ঈদের পরই টাকা নিয়ে নেবো’। স্নেহের বোন যখন একথাটি বলছিলেন, মায়নুলের চোখ বেয়ে তখন অশ্রু ঝরছিলো। তার রোজগারে নির্ভরশীল পুরো পরিবারটি-ই-যে এই বোনাসের দিকে তাকিয়েছিল! স্বপ্নভাঙা মানুষগুলোর মুখগুলো এখন কেমন দেখাচ্ছে?
এ পরিবারের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিচ্ছে ‘অভিজাত’ স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড ব্যাংক। স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড অনুমোদিত ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে এ দুঃখজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ঢাকার চাকরিজীবী মায়নুলকে।
মায়নুল বাংলানিউজকে আক্ষেপ করে বলেন, ২০ হাজার টাকা স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড ব্যাংকের জন্য কিছুই নয়। কিন্তু এটা আমার জন্য অনেক কিছু, আমার পরিবারের ঈদ-আনন্দ।
তিনি বুঝতে পারছেন না, এবারের ঈদটা কেমন যাবে তার স্বপ্নভাঙা পরিবারের। তবে এই অভিযোগ করেও কোনো সমাধান হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় মায়নুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
এইচএ