ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাস্তবায়নে গড়িমসি

১১৭ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় এখন ৭৪১ কোটি!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
১১৭ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় এখন ৭৪১ কোটি! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় শুরু হয়েছিল। সেই প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪১  কোটি ৩৬ লাখ টাকায়।

শুধু ব্যয়ই বাড়েনি; প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও গড়িমসিও করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর’ প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। বাস্তবায়নের কথা ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ মেয়াদে।

কিন্তু বার বার টেন্ডার পরিবর্তনের কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় এখন ৭৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে জুন ২০১৭ সাল। প্রকল্প সাহায্য ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (ঋণ) ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্প ব্যয় সরকারি অর্থায়নের পরিবর্তে ভারতীয় এলওসি ঋণে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের ধরন পরিবর্তন হওয়ার কারণে ব্যয় বাড়ছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং বাংলাদেশের কুলাউড়া-শাহবাজপুর অংশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একত্রীকরণের লক্ষ্যে মিটার গেজ (এমজি) ট্র্যাককে নতুনভাবে ব্রডগেজ মেইন লাইনে (বিজিএমএল) রূপান্তর করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনের শাহবাজপুর থেকে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত পর্যন্ত লাইন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে করে মূল অনুমোদিত রেলওয়ে ট্র্যাকের চেয়ে দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

বিদ্যমান মিটার গেজ ট্র্যাকের স্থলে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ করে কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনের ৫১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার মিটার গেজ লাইন পুনর্নিমাণ করা হবে। এছাড়া ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন রেল সংগ্রহসহ ৫৩৫ ঘন মিটার স্পেশাল উডেন স্লিপার সংগ্রহ করা হবে।

সূত্রটি জানায়, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৯ হাজার ৮৫০ ঘনমিটার ব্যালাস্ট, ২ লাখ ৫০ হাজার ঘন মিটার মাটির কাজসহ ছয়টি স্টেশন ভবন পুননির্র্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ছোটবড় ৫৯টি সেতু পুননির্র্মাণ করা হবে।

রেলওয়ে সূত্রটি আরো জানায়, প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ ও ডুয়েল গেজের সংস্থান রাখার ফলে প্রকল্প ব্যয়ের তারতম্য হয়। প্রকল্পে ৫২ কেজি রেলের পরিবর্তে ৬০ কেজি রেল ব্যবহার করা হচ্ছে। সে কারণে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি হচ্ছে প্রকল্পের।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব-চট্টগ্রাম) মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের টেন্ডার পরিবর্তন হওয়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়া, আমরা মিটার গেজের পরিবর্তে ডুয়েল গেজে রূপান্তর করছি। ৫২ কেজি রেলের পরিবর্তে ৬০ কেজি রেল ব্যবহার করতে যাচ্ছি। সে কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, শাহবাজপুর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে করে মূল অনুমোদিত রেলওয়ে ট্র্যাকের চেয়ে দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি ঘটছে।

অপরদিকে, প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশের সম্পদের অপচয় হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অস্বাভাবিকভাবে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। বাস্তবায়নে দক্ষতা থাকলে এভাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেতো না। সময় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের উপকরণেরও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে দেশের সম্পদের ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। সম্পদের অপচয় রোধ করতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, সময় মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে করে প্রকল্প এলাকার জনগণ যেমন যথাসময়ে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন; তেমনি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ও কম হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
এমআইএস/এবি/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।