ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিবন্ধন সনদ হারাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স!

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
নিবন্ধন সনদ হারাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স!

ঢাকা: পুনঃবিমা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করায় বিমা ব্যবসার নিবন্ধন সনদ হারাতে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গবেঞ্চের রায়ে কোম্পানিটির ভাগ্য নির্ধারিত হবে।

এ বিষয়ে আগামী ৩০ জুলাই শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত রয়েছে।
 
আপিলের রায় স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র বিরুদ্ধে গেলে প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে আর কোন বিমা পলিসি বিক্রি করতে পারবে না। অর্থাৎ বিমা ব্যবসার সনদ হারাবে কোম্পানিটি। আর এমনটি হলে অনিয়মের কারণে সনদ বাতিল হওয়া দেশের প্রথম বিমা কোম্পানি হবে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) চেয়ারম্যন এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স যে অনিয়ম করেছে ২০১০ সালের বিমা আইন অনুযায়ী কোম্পানির সনদ বাতিল হয়ে যাবে।
 
কোম্পানির সনদ বাতিল হলে পলিসি গ্রাহকদের কি হবে জানতে চাইলে শেফাক আহমেদ বলেন, যেসব পলিসি বিক্রি করা হয়েছে, এক বছর পর সেগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হলে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করবে কোম্পানি। আর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় কোম্পানিটি নতুন পলিসি বিক্রি করতে পারবে না।
 
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডাদের কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হবে। তবে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের অনিয়ম সনদ বাতিলযোগ্য। এটি (সনদ বাতিল) বন্ধ করতে হলে বিমা আইন পরিবর্তন করতে হবে।
 
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, সন্তোষজনকভাবে পুনঃবিমা ব্যবস্থাকার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২১ জুন থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন সনদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে নিবন্ধন সনদ কেন বাতিল করা হবে না ৩০ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়।
 
পাশাপাশি নিবন্ধন সনদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কোন নতুন বিমা কাভারনোট, বিমা সার্টিফিকেট বা বিমা পলিসি জারি (ইস্যু) না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ২১ জুনের আগে জারিকৃত বিমা পলিসির কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ রাখা হয়।
 
এর আগে গত ৩১ মে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স আইডিআরএকে দেওয়া এক চিঠিতে স্বীকার করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কিছু বিমা পলিসির ক্ষেত্রে মোট ৪৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার ঝুঁকি পুনঃবিমা করা হয়নি।
 
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এ বিষয়ে আইডিআরএ বলছে, পুনঃবিমা ব্যবস্থা হচ্ছে সাধারণ বিমার অন্যতম মূলনীতি। পুনঃবিমা ব্যবস্থায় কোন ব্যত্যয় হলে তা কোম্পানির মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
 
এজন্য বিমা কোম্পানিকে নিবন্ধন সনদ দেওয়ার অন্যতম শর্ত হিসেবে ২০১০ সালের বিমা আইনের ৯ ধারায় পুনঃবিমা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইনের ১০ ধারায় সন্তোষজনকভাবে পুনঃবিমা সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিত রাখার বিধান করা হয়েছে।
 
আইডিআরএ স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকে জানিয়েছে, সন্তোষজনকভাবে পুনঃবিমা ব্যবস্থা গ্রহণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে বিমা আইন, ২০১০ এর ১০(১)(ঝ) ধারার বিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সনদ বাতিল যোগ্য। কোম্পানি চাইলে নির্দেশের বিষয়ে বিধি মোতাবেক শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারে বলেও জানানো হয়।
 
এরপর আইডিআরএ’র নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে ২৯ জুন স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স হাই কোটে রিট (নম্বর-৬৫৮০) করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আইডিআরএ আপিল করলে ৬ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত।

একই সঙ্গে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গবেঞ্চে যাওয়ার অনুমতি দেন। এরপর পূর্ণাঙ্গবেঞ্চে আপিল করলে আদালত আগামী ৩০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন।
 
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স পুন:বিমা সংক্রান্ত অনিয়মটি করে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পলিসিতে। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর কোনাবাড়িতে গ্রুপটির বহুতল একটি ভবন আগুনে পুড়ে যায়। এরপর এই অগ্নিকাণ্ডের বিমা দাবির টাকা তুলতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠে গ্রুপটির বিরুদ্ধে।
 
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। ওই তদন্ত দলের প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা করপোরেশন ও ক্ষয়ক্ষতি জরিপকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর পারষ্পরিক যোগসাজসের চিত্র উঠে আসে।
 
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এ্যামেক্স লিমিটেডের নামে অগ্নিবিমার একটি পলিসির (পলিসি নম্বর-এসআইএল/ইআরবি/ এফপি-০২২/০২/২০১৩) বিমা অংক ৪০ কোটি টাকা। এ পলিসি ইস্যু করা হয় ২০১৩ সালের ১৮ ফ্রেবুয়ারি। পলিসির প্রিমিয়াম দেওয়া হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। আর ব্যাংকে তা জমা করা হয়  ২৪ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ পলিসিটি করা হয় বাকিতে।
 
এই পলিসিটি ইস্যুর আগে কোনো পূর্ব জরিপ করা হয়নি। পলিসিটির পূর্ব জরিপ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর। অর্থাৎ পলিসি করার ৮ মাস পরে।
 
পলিসিটির আওতায় এনডোর্সমেন্ট করা হয় ২টি। একটি এনডোর্সমেন্ট  (এনডোর্সমেন্ট নম্বর-০০৪/০৩/২০১৩)  দেখানো হয়েছে পলিসি ইস্যুর এক মাস পরে। এতে বিমা অংক বাড়ানো হয়েছে ১৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এনডোর্সমেন্টটি ইস্যু করা হয়েছে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ।
 
এনডোর্সমেন্টটির প্রিমিয়ামের টাকার চেক ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে একই বছরের ১৮ মার্চ। ব্যাংক তা হিসাব ভুক্ত করে পরের দিন ১৯ মার্চ। অর্থাৎ এটিও করা হয় বাকিতে।
 
পলিসিটির ৪০ কোটি টাকা বিমা অংকের মধ্যে ওয়ন রিটেনশন ৫০ লাখ। সারপ্লাস ট্রিটি ২৫ কোটি। সারপ্লাস ট্রিটি ও ওয়ন রিটেনশন মিলে মোট দাড়ায় ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
 
এরমধ্যে ফ্যাকালটেটিভ পুন:বিমা দেখানো হয়েছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ ফ্যাকালটেটিভ পুন:বিমার বিপরীতে কোনো পুন:বিমার প্রিমিয়াম সাধারণ বিমা করপোরেশনকে পরিশোধ করা হয়নি। আইন অনুসারে ফ্যাকালটেটিভ পুন:বিমার প্রিমিয়াম করার ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা আবশ্যক।
 
একই ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের আরও কয়েকটি পলিসির ক্ষেত্রে।
 
সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য নিতে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স’র মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এটিএম কাদের নেওয়াজ’র মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
এএসএস/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।