ঢাকা: পাঁচ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বনিম্ন এ মুদ্রা এখন থেকে আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।
পাঁচ টাকার নতুন নোট ইস্যু না করতে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী বছরের শুরুর দিকে অর্থ সচিব স্বাক্ষরিত পাঁচ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, পাঁচ টাকার ব্যাংক নোট সরকারি মুদ্রায় রূপান্তরিত হলে বাজারে প্রচলিত পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন বাতিল করার প্রয়োজন হবে না। পর্যায়ক্রমে সরকার ছাপানো নতুন নোটগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু করা নোটগুলোর জায়গায় প্রতিস্থাপিত হবে।
এর আগেও মূল্যস্ফীতির কারণে ১৯৭২ সালের ‘বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার’ সংশোধন করে ১৯৮৯ সালে দুই টাকার ব্যাংক নোটকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তরিত করা হয়। তার আগ পর্যন্ত এক টাকাই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মুদ্রা।
পাঁচ টাকাকেও সরকারি মুদ্রা করতে ১৯৭২ সালের ‘বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার’ (রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮৩-১৯৭২) অর্থ বিভাগের উদ্যোগে সংশোধন করতে হবে। তারপর ট্রেজারি রুলস ও এর অধীনে বিদ্যমান সাবসিডিয়ারি রুলসগুলো সংশোধনের পরই অর্থ বিভাগ পাঁচ টাকার মুদ্রা ছাপানোর কাজ করতে পারবে।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট ও কয়েন সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর শীর্ষক সভায় পাঁচ টাকাকে সরকারি মুদ্রা করার সিদ্ধান্ত সবার মতামতে গৃহীত হয়।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের ২২ জুন এ বিষয়ের একটি সার সংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, বাজারে প্রচলিত সরকারি মুদ্রা দুই টাকার নোট ও কয়েনগুলোর ক্রয় ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। তাই বর্তমানে পাঁচ টাকার নোটকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর করা প্রয়োজন।
যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়, ১৯৭৪-৭৫ সালের এক টাকার ক্রয় ক্ষমতা ২০১৪ সালে হয়েছে ১২ দশমিক ৪৫ টাকার সমান। এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের ঐতিহ্যের স্মারক সরকার প্রবর্তিত মুদ্রাগুলো বাজার থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিরসন ও মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট ও কয়েনগুলো সরকারের মালিকানায় নেওয়া যেতে পারে।
এতে সরকারের নোট ও কয়েনের অনুপাত বর্তমানের শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে এক দশমিক পাঁচ শতাংশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ পর্যায়ক্রমে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা হ্রাস পাবে।
উৎপাদন খরচ বাদে বাকি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। মোট অর্থের যোগান অপরিবর্তিত থাকলে দেশে মূল্যস্ফীতির কোনো প্রভাব পড়বে না বলে যুক্তি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি মুদ্রায় রূপান্তরিত হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকলে মুদ্রানীতি বিভাগ নানা কৌশল অবলম্বন করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
তবে পাঁচ টাকার ব্যাংক নোটকে সরকারি মুদ্রা করার জন্য আইনের কিছু সংশোধন করতে হবে। সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৮৯ (অ্যাক্ট নম্বর ১-১৯৮৯) ১৯৭২ সালের ৩৩ (২) ধারা সংশোধন করে ফাইভ (five) এর পরিবর্তে টেন (ten) শব্দটি প্রতিস্থাপিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের মতামত নেই। সরকার যেভাবে চাইবে সেভাবেই চলবে। এখনও আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আসেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
এসই/এসএস/এনএস