ঢাকা: ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শপিং মলগুলোতে বেড়েছে মানুষের পদচারণা। উৎসবমুখর মানুষের ভিড়ে বেশ দাপটের সঙ্গে বাজার দখল করে নিয়েছে পাকিস্তানি পোশাক।
শনিবার (১১ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল ঘুরে জানা যায়, ঈদ বাজার ভরে উঠছে পাকিস্তানি থ্রি-পিস, সালোয়ার-কামিজ, লন ও কুর্তায়।
বিক্রেতারা জানান, ভারতীয় পোশাকের চেয়ে পাকিস্তানি পোশাকের দাম কম ও সুন্দর ডিজাইনের হওয়ায় এবারের ঈদে দেশীয় পোশাকের চাহিদা কম। লাভ কম বলে দোকানে দেশীয় পোশাক তুলেননি অনেক বিক্রেতা।
পাকিস্তানি পোশাকের জন্য পরিচিত সুবাস্তু এরোমা মার্কেট। সেখানকার থ্রি-পিস দোকানের বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার ঈদের আগে থেকেই কাজ করা পাকিস্তানি থ্রি-পিস, স্ট্রিস ও স্ট্রিস ছাড়া থ্রি-পিস এবং পাকিস্তানি লন ডিজাইনের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় পোশাকের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে এসব পাকিস্তানি পোশাক।
সেখানকার মাই চয়েস নামের আরেক বিপণি বিতানের বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাকিস্তানি পোশাকের ওপর এক শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে সরকার। তারপরও ঈদে কেনাকাটা করতে এলে কাস্টমাররা পাকিস্তানি পোশাকই খোঁজে। আমার দোকানে কিছু দেশীয় পোশাক আছে। কিন্তু সেগুলোর বেশির ভাগই এখনও বিক্রি করতে পারিনি।
মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় নেহা ফ্যাশান। সেখানে পাকিস্তানি সূতা ও পুঁথির কাজ করা থ্রি-পিস কিনেছেন মিরপুরের বাসিন্দা ইভা রহমান।
তিনি বলেন, দেশীয় পোশাকের দাম কম তবে মান ভালো না। আবার ভারতীয় পোশাকের হরেক রকম ডিজাইন থাকলেও দাম অনেক বেশি। কিন্তু পাকিস্তানি পোশাকের দামও কম আবার কাপড়ের মানও ভালো। তাই দেখেশুনে পাকিস্তানি থ্রি-পিসই কিনেছি।
গাউছিয়া মার্কেটের লেডি ওয়ার্ল্ড বিপণি বিতানের বিক্রেতা আখতার হোসেন বলেন, আমার দোকানে বেশির ভাগই পাকিস্তানি পোশাক। দেশি পোশাকে লাভ কম বলে এখানে দেশি পোশাক খুব কমই রাখি। তাছাড়া ঈদ বাজারে ক্রেতারা দেশীয় পোশাক কিনতেও চায় না।
কোহিনুর মার্কেটের শাড়ি দোকানের বিক্রেতা সুমন জানান, গত বছর দেশীয় শাড়ি বেশি চাহিদা ছিল ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু এবার দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি পাকিস্তানি কয়েকটি ডিজাইনের শাড়িও বাজারে ভালো চলছে।
নিউমার্কেটের বুটিকস হাউসের অনুরুপা বলেন, দেশীয় পণ্যের চাহিদা আগে থেকেই কম। তবে ঈদ বা অন্য কোনো উৎসবে পরার জন্য বাইরের দেশের পোশাকই ক্রেতারা বেশি পছন্দ করে। তাই দেশি পোশাকের চাহিদা কম থাকে।
ইস্টার্ন প্লাজার রাজ্জাক ফ্যাশানে পাকিস্তানি স্কার্ট কিনছেন ফার্মগেটের শাহিনা চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি সবসময় পাকিস্তানি পোশাকগুলো কেনার চেষ্টা করি। কারণ পাকিস্তানিদের বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকগুলো যে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে পড়ে যাওয়া যায়। যা দেশীয় পোশাক বা ইন্ডিয়ান পোশাকের ক্ষেত্রে ততটা মানানসই হয় না। তাই ভাবলাম পাকিস্তানি পোশাকেই এবারের ঈদ উদযাপন করবো।
পাকিস্তান ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন, ফ্রান্সসহ ১২টি দেশের পোশাক ঈদের বাজারে রয়েছে। তবে ভারতীয় পোশাকেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। ‘কিরণমালা’, ‘রাজকুমারী’, ‘ইচ্ছে নদী’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘জলকন্যা’ এসব বাহারি ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নামের পোশাকগুলো দাপটের সঙ্গে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই তালিকা থেকে বাদ যাননি।
বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজাসহ অভিজাত বিপণি বিতানগুলোর অবস্থাও একই রকম। ঈদ বাজারে ছেয়ে গেছে নানা নামের রংবেরংয়ের পাকিস্তানি ভারতীয় তৈরি পোশাকে। ফলে প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও লোকসান গুণতে হচ্ছে দেশিয় পোশাক বিক্রেতাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
জেডএফ/টিআই