ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করবে জাপান

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করবে জাপান

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে শিক্ষানবীশ শ্রমিক নিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে দক্ষ করে ফেরত পাঠাবে জাপান। সেই সঙ্গে দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য বিশেষ অর্থ সহায়তাও দেবে দেশটি।

সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাপানের ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (আইএম-জাপান)।

নির্মাণ ও উৎপাদনমুখী খাতে প্রতি বছর ৫শ'র বেশি শিক্ষানবীশ কর্মী নেবে প্রতিষ্ঠানটি। তিন বছর ধরে তারা জাপানে যে কাজে দক্ষতা অর্জন করবেন,দেশে ফিরে যেন ছোট করে হলেও কোন ব্যবসা করতে পারেন বা আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন সেজন্য তাদেরকে তিন মিলিয়ন ইয়েনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে। দেশে ফেরত এসেও তারা প্রায় ছয় লাখ ইয়েনের সমপরিমান অর্থ পাবেন। এছাড়া সেখানে থাকাকালীন বেতন তো পাবেনই।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে,শুরুতে স্বল্প সংখ্যায় নিলেও ধীরে ধীরে এ সংখ্যা বাড়াবে জাপান। একজন কর্মী শুধু শ্রমিক হয়ে দেশটিতে গেলেও ফিরবেন একজন উদ্যোক্তা হয়ে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার এটি একটি দারুণ সুযোগ।

সম্পূর্ণ বিনা খরচে এসব শিক্ষানবীশ শ্রমিক জাপান যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে যাওয়ার আগে দেশেই তাদেরকে ভাষা ও কাজের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ প্রশিক্ষণের আয়োজনও জাপানের পক্ষ থেকে করা হবে।

ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় ১৪টি দেশ থেকে শিক্ষানবীশ শ্রমিক নিয়ে থাকে জাপান। এ সব শ্রমিকরা দেশে ফিরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “বর্তমানে অল্প সংখ্যক টেকনিক্যাল ইন্টার্ন জাপানে যান। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ইন্টার্ন সেদেশে পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এবার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে পাঠানোর চুক্তি করা হয়েছে।

শুরুতে স্বল্প সংখ্যক কর্মী নেওয়ার কথা বললেও আমরা আরো বেশি নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে তারা দেশে ফিরে নিজেরাই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবেন। এদেশের কর্মীদের জন্য এটা একটি দারুণ সুযোগ। ”

জাপানের আন্তর্জাতিক শ্রমশক্তি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান কইয়ো ইনাগিসাওয়া বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন করা হবে। অংশগ্রহণকারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে আর্থিক সহায়তাও পাবে। ”

অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় শ্রম বাজারে শ্রমিক পাঠালেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর তারা দেশে ফিরে আসেন একেবারে খালি হাতে। সে সব দেশে তারা যেসব কাজ করতেন দেশে ফিরে সে সব কাজ করতে বেশিরভাগ বিদেশ ফেরত কর্মীরই অনাগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। সেক্ষেত্রে জাপানের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। তারা দক্ষ করেই শ্রমিকদের ফেরত পাঠাবে।

জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, জাপান সহজেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। দীর্ঘদিনের গবেষণার মাধ্যমে তারা কোন একটি চুক্তির দিকে যায়। এ বিষয়েও দীর্ঘ কূটনৈতিক যোগাযোগের পর বাংলাদেশ থেকে শিক্ষানবীশ কর্মী নিতে চুক্তিতে সম্মত হয় তারা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ২০২০ সালে টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিক আয়োজন করতে যাচ্ছে জাপান। সে উপলক্ষে দেশটিতে নতুন নতুন স্থাপনা গড়তে এবং অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রচুর নির্মাণ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। বাংলাদেশের কর্মীরা যদি সেখানে গিয়ে দক্ষতার প্রমাণ দেয় তাহলে দেশটি এ কাজে আরো শ্রমিক নেওয়ার কথা ভাববে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের অলিম্পিক গেমসের আয়োজক হওয়ার পরে টোকিওর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন।

জাপানে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, “জাপান এখনো সেই অর্থে কোন দেশ থেকেই শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দেয়নি। তবে বাংলাদেশের উচিৎ দক্ষ শ্রমিকদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা। যেন প্রয়োজন পড়লে এ সব দেশ বাংলাদেশ থেকে তৎক্ষণাৎ শ্রমিক নিতে পারে। এছাড়া শিক্ষানবীশ কর্মী পাঠানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। কারণ জাপানে একজন শ্রমিক যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে দশ জন শ্রমিক যাওয়ার সমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
জেপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।