ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাঁচাবাজারে মূল্য তালিকায় গরমিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
কাঁচাবাজারে মূল্য তালিকায় গরমিল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে প্রবেশ করতেই বাম পাশে মূল তালিকা বোর্ড। পুরাতন এ বোর্ডে অস্পষ্টভাবে চক দিয়ে লেখা কাঁচাবাজারের পাইকারি ও খুচরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা।


 
তালিকায় কেজিপ্রতি রসুনের খুচরা মূল্য লেখা রয়েছে ৫০ টাকা। কিন্তু বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
 
এছাড়া, বোর্ডে দেওয়া মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি বেগুন ও কাঁচামরিচ ২০ টাকা, আখের গুড় ১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ চিত্র রোজার সময়ের। তবে কী রোজা; কী সাধারণ দিন! প্রতিদিনই এমন সমস্যা-ঝামেলা সহ্য করেই পণ্য-দ্রব্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
 
আরও আছে, শুধু কাঁচাবাজারের মূল্য তালিকায় নয়। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা সব কাঁচাবাজারের মূল্য তালিকার বোর্ডের একই অবস্থা! প্রতিদিনই মনগড়া ও বাজারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য, ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে এসবে।
 
সংশ্লিষ্টরা জানান, খুচরা বাজারে ক্রেতারা যেন সঠিক মূল্যে পণ্য কিনতে পারেন এ উদ্দেশেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মূল্য তালিকা বোর্ড লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রতিদিনের পণ্য মূল্য হালনাগাদ করা হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
 
বিজয়স্মরণী মোড়ের পাশে কলমিলতা কাঁচাবাজারে মূল প্রবেশপথের বাম পাশে পুরোনো বোর্ডে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তবে তা অস্পষ্ট। গত ২০ জুন তালিকায় দেওয়া মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ ২৫ টাকা, আলু ৫ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, রসুন ৪০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।

বোর্ডের সামনে একটি ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকান দেখা গেলো। ফলের দোকানিকে জিজ্ঞেস করলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হলেন না। বাজারে কাঁচাপণ্য বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তা এসে তারিখ পরিবর্তন ও নিজেদের ইচ্ছে মতো পণ্যের দাম লিখে চলে যান।
 
সাইদুল নামের এক কাঁচাপণ্যের বিক্রেতা জানান, বোর্ডের দামের সঙ্গে তাদের দামের পার্থক্যের মূল কারণ দোকানিরা পাইকার থেকে পণ্য কিনে বিক্রি করেন। আর যারা তথ্য লিখেন তারা নিজের ইচ্ছে মতো দাম লিখেন।
 
অবশ্য ক্রেতাদের সুবিধার্থে সিটি করপোরেশনের এ ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ ক্রেতা এ বোর্ডের দিকে তাকান না এবং এখানে কী তথ্য দেওয়া আছে তাতে কোনো মাথা ব্যথাও নেই তাদের।
 
মিরপুর ১নং কাঁচাবাজারে কথা হয় কাঁচাপণ্যের ক্রেতা রশিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের দেওয়া মূল্য তালিকা ক্রেতারা সাধারণত কেউ দেখেন না। বোর্ডের দেওয়া মূল্যের কথা দোকানিদের বললে তারা গুরুত্ব দেন না।
 
হাতিলপুল থেকে কাঁচাবাজার করে ফিরছিলেন ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হতে হবে। এজন্য দরকার কঠোর নজরদারি।
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিনটি পাইকারি বাজারের মূল্য হিসাব করে বোর্ডে খুচরা মূল্যে তুলে ধরা হয়। এছাড়া বাজারভেদে দুই একটি পণ্যের দাম কমবেশি হতেই পারে।
 
তবে এ কর্মকর্তা মনে করেন, বিক্রেতারা সবসময় চেষ্টা করেন পণ্যের দাম একটু বেশি রাখার। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের একটু সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে দামের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা উচিত।
 
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার জানান, এসব বিষয় বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি দেখভাল করে। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
এছাড়া, রাজধানীর হাতিরপুল, নিউমার্কেট, মিরপুর, ‍গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোনো ক্রেতাই এ বোর্ডের ওপর আস্থা রাখেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় ২৫টি পণ্যের খুচরা ও পাইকারি মূল্যে দেওয়া হয় এখানে।
 
প্রায় প্রতিটি বোর্ডের সামনেই একজন কাঁচাপণ্যের বিক্রেতা দোকান বসিয়েছেন। অনেক বাজারে বোঝাই যায় না এরকম কোনো মূল্য তালিকা আছে কি নেই। বিক্রেতারা যে দাম নির্ধারণ করে দেন সেই দাম দিয়েই পণ্য কিনতে হয় ক্রেতাদের।

তাই তো সাধারণ মানুষের অভিযোগ ও প্রশ্ন যেটি কাজে লাগে না সেটি হালনাগাদ বা লাগিয়ে কী লাভ?

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
একে/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।