ঢাকা: নৌপথের নাব্যতা বাড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বহরে যুক্ত হচ্ছে ২০টি আধুনিক ড্রেজার ও ২০টি ক্রেনবোট। ড্রেজার ও ক্রেনবোট সংগ্রহ করার মাধ্যমে প্রতিবছর ড্রেজিং সক্ষমতা ২৩১ দশমিক ৫০ ঘন মিটার বাড়ানো হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি অর্থায়নে ২০টি ড্রেজার ও ২০টি ক্রেনবোট আন্তর্জাতিক রি-টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় করা হবে দুই হাজার ৪৮ কোটি টাকা। ২৬ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার ৬টি, ২০ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার ৯টি ও ১৮ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার কেনা হবে ৫টি।
এই প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) জিকরুর রেজা খানুম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি অর্থায়নে ২০টি ড্রেজার ও ২০টি ক্রেনবোটসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। দ্রুত সময়ে আমরা আন্তর্জাতিক রি-টেন্ডারের আহ্বান করবো। কম দামে ভালো মানের ড্রেজার যেসব কোম্পানি দিতে পারবে তাদের মাধ্যমে আমরা এগুলো সংগ্রহ করবো। ’
তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন দেশের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ মাধ্যম। দেশে এখনও এমন এলাকা বিদ্যমান আছে যেখানে নৌ-পরিবহনই পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম। প্রতিবছর ড্রেজিং সক্ষমতা ২৩১ দশমিক ৫০ ঘন মিটার বাড়িয়ে জনপরিবহন ব্যবস্থার আওতাও বাড়ানো হবে। ’
২০টি ড্রেজিং কেনা প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ জানায়, বর্তমানে নৌপথগুলোর নাব্যতা রক্ষার্থে বাৎসরিক ড্রেজিংয়ের চাহিদা তিনশ লাখ ঘনমিটার যার মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ‘র ড্রেজিং বহরের সক্ষমতা মাত্র ৯০ হাজার ঘন মিটার। ২০টি ড্রেজার কেনা হলে ড্রেজিং সক্ষমতা বাড়বে। ’
অন্যদিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘২০টি ড্রেজারসহ সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং সক্ষমতা বাড়ানো হবে। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২০টি ক্রেনবোট, ৮টি টাগবোট, ২০টি ক্রু-হাউজ, ৮টি অফিসার্স হাউজবোট, ৫টি ইনল্যান্ড সার্ভে ভেসেল, ১০টি সার্ভে ওয়ার্কবোট ও ১২টি পাইপ ক্যারিয়িং বার্জ কেনা হবে।
এছাড়া, পাঁচটি ওয়েল বাজ, পাঁচটি ওয়াটার বাজ, তিন হাজার দুইশটি শোর পাইপ, ১৬শ ফ্লোটিং পাইপ, একশ জোড়া বল সকেট, পাঁচশটি রাবার হোস পাইপ কেনা হবে।
প্রকল্পের আওতায় একটি পিকআপ, একটি জিপ গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ছয়টি কম্পিউটার এবং তিনটি ফটোকপিয়ার কেনা হবে।
নানা কারণে প্রকল্পটি দ্রুত হাতে নিতে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। ‘বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড সেক্টর স্টাডি’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে নৌ-পথের পরিমাণ বর্ষাকালে ৬ হাজার কিলোমিটার এবং শুকনা মৌসুমে ৩ হাজার ৮’শ কিলোমিটার। অথচ ১৯৯৮ সালের পূর্বে ছিল যথাক্রমে সাড়ে ৮ হাজার এবং সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার । নদীর পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা হ্রাস ছাড়াও মাছের উৎপাদন ও সেচ কার্যক্রম কমে যাচ্ছে।
বিশেষ করে বন্যার সময় পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সার্বিক অর্থনীতির উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, দেশের নৌ-পথের নাব্যতা উন্নয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশের আভ্যন্তরীণ নৌপথসমূহের বিদ্যমান চ্যানেলসমূহের উন্নয়ন এবং জলযানসমূহের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। যাত্রীরা যেন চলাচলে শুধু সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল না হন। দেশে নৌ-পথের বিস্তৃতি যেন বাড়ে সেটাও লক্ষ্য। এছাড়া অল্প বৃষ্টিতে যাতে করে দেশের মানুষ বন্যায় প্লাবিত না হয়, সেজন্য বন্যা রোধও এই প্রকল্পের প্রধান আরেকটি উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
জেএম