ঢাকা: শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ। ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এসভিআরএস)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে শহরের চেয়ে গ্রামে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে মরণশীলতা প্রতি হাজার জনসংখ্যায় ৫ দশমিক ৩ জন। যা পল্লী এলাকায় ৫ দশমিক ৬ জন এবং শহর এলাকায় ৪ দশমিক ৬ জন। ২০০৯ সালে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮, যা ২০১৩ সালে কমেছে ৫ দশমিক ৩ জনে।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে এসভিআরএস প্রতিবেদন প্রকাশে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনের মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মরণশীলতার এই অবস্থা শহর ও পল্লীর ক্ষেত্রে যথাযথ হলেও শহরের তুলনায় পল্লীতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। মাতৃমৃত্যুর অনুপাত গত পাঁচ বছরে সমহারে কমে আসছে। ২০০৯ সালে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ছিল ২ দশমিক ৫৯ যা ২০১৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯৭ জনে। গত পাঁচ বছরে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল গড়ে প্রতি বছরে ০ দশমিক ৬৪ বছর হারে বেড়েছে। প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ২০০৯ সালের ৬৭ দশমিক ২ বছর থেকে বেড়ে ৭০ দশমিক ৪ বছর হয়েছে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের গড় আয়ু বেশি বেড়েছে।
২০১৩ সালের জন্য প্রণীত ফলাফল থেকে দেখা যায় নমুনা এলাকায় প্রতি হাজার জনসংখ্যার জন্য আগমনের হার ৪০ দশমিক ৪ জন এবং বহির্গমণের হার ৩৯ দশমিক ৯ জন। অর্থাৎ প্রতি হাজার জনসংখ্যার ক্ষেত্রে নিট মাইগ্রেগশনের হার মাত্র ০ দশমিক ৫ জন। প্রতি হাজার জনসংখ্যার ক্ষেত্রে পল্লী এলাকায় আগমনের হারের ৩১ দশমিক ৭ জন তুলনায় শহর এলাকায় আগমনের হার ৭০ দশমিক ৪ জন। অর্থাৎ এক হাজার মানুষের মধ্যে ৭০ জন শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১৯৮০ সাল হতে দ্বৈত পদ্ধতিতে জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ও স্থানান্তর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। ১৯৮০ সালে মাত্র ১০৩টি (৬২টি পল্লী + ৪১টি শহর) নমুনা এলাকায় এ তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়।
১৯৮৩ সালে জরিপের নমুনা এলাকার সংখ্যা ১০৩টি হতে ২১০ এ উন্নীত করা হয়। যার মধ্যে পল্লী এলাকায় ছিল ১৫০টি এবং শহর এলাকায় ছিল ৬০টি। কিন্তু নমুনা এলাকার সংখ্যা কম হওয়ায় এ কার্যক্রমের আওতায় সংগৃহীত তথ্য জেলা পর্যায়ে এস্টিমেট করা সম্ভব হতো না। তাই ১৯৯৫ সালে নমুনা এলাকার সংখ্যা ২১০ হতে ৫০০ তে উন্নীত করা হয়।
বর্তমান রিপোর্টটি ২০১৩ সালে মোট ১ হাজার ৫০০ নমুনা এলাকা থেকে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ১ হাজার ৫০০টি নমুনা এলাকায় ২০১৩ সালে মোট ১৫ লাখ ৮ হাজার ৮২৯ টি খানা ছিল।
কমেছে নির্ভরশীলতার হার:
নির্ভরশীলতার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। ২০০২ সালে হাজারে ছিল ৮০ এবং ২০১৩ সালে হয়েছে ৫৮। ২০০২-২০১৩ এ সময়ে এই হার ৩১ ভাগ কমেছে। বাংলাদেশের মহিলারা এখন ও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
এসভিআরএস রিপোর্ট- ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৮৮ ভাগ পরিবারের খানা প্রধান হচ্ছেন পুরুষ। বয়স্ক শিক্ষার হার বেড়েছে। ২০০৯ সালে যা ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং এ হার ২০১৩ সালে বেড়ে দাড়িয়েছে শতকরা ৬০ শতাংশ। জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায় গ্রামীণ জনসংখ্যার চেয়ে শহরের জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ বেশি শিক্ষিত।
জন্মশীলতা:
এসভিআরএস রিপোর্ট-২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ১৯ জন জন্ম গ্রহণ করছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রাম এলাকার জন্মহার শহর এলাকার জন্মহারের চেয়ে বেশি। প্রতি হাজারে গ্রামে ১৯ দশমিক ৩ জন জন্ম গ্রহণ করছে অপরদিকে শহরে ১৮ দশমিক ২ জন জন্ম নিচ্ছে।
২০১৩ সালে প্রতি হাজার মহিলার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রজনন হার পাওয়া গিয়েছে ৭১। পল্লী এলাকায় এই হার হচ্ছে ৭৩ এবং শহর এলাকায় তা ৬৩। মোট প্রজনন হার ২০১৩ সালে পাওয়া গিয়েছে ২ দশমিক ১১ যা ২০১২ সালে ছিল ২ দশমিক ১২। ২০১৩ সালের মোট প্রজনন হার ২০১২ সালের মোট প্রজনন হারের থেকে সামান্য কম। জন্মশীলতার সবগুলো পরিমাপ তুলনা করলে দেখা যায় যে গত ০৫ (পাঁচ) বছরে বাংলাদেশে জন্মের হার অনেক কমে গিয়েছে।
বিবাহের গড় বয়স:
গত পাঁচ বছরের বিবাহের গড় বয়স প্রায় স্থিতি অবস্থায় রয়েছে। ২০০৯ সালে পুরুষের বিবাহের গড় বয়স ছিল ২৩. দশমিক ৮ বছর এবং মহিলাদের বিবাহের গড় বয়স ছিল ১৮ দশমিক ৫ বছর। ২০১৩ সালে পুরুষের বিবাহের গড় বয়স হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ বছর এবং মহিলাদের বিবাহের গড় বয়স হয়েছে ১৮ দশমিক ৪ বছর।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার:
গত পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেশ বেড়েছে। ২০০৯ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে এই হার হয়েছে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ।
প্রতিবন্ধি:
এসভিআরএস নমুনা এলাকা থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে প্রস্তুতকৃত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৯ জন মানুষ কোননা কোনভাবে প্রতিবন্ধি। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে প্রতিবন্ধির হার বেশি। ২০১৩ সালে পুরুষ প্রতিবন্ধির হার প্রতি হাজারে ৯ দশমিক ৭ জন এবং মহিলা প্রতিবন্ধির হার ৮ দশমিক ২ জন।
এইচআইভি/এইডস:
বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৩ সাল থেকে প্রথমবারের মতো এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মহিলাদের জ্ঞান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় মাত্র ১৯ ভাগ মহিলা এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের সকল পদ্ধতি সম্পর্কে জানে। কিন্তু এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের যে কোনো একটি পদ্ধতি সম্পর্কে শতকরা ৬০ ভাগ মহিলা জানে।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে উপস্থিত ছিলেন, বিবিএস সচিব কানিজ ফাতেমা, বিবিএস-এর মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, অতিরিক্ত সচিব এম এ মান্নান হাওলাদার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এমআইএস/এমজেএফ