ঢাকা: শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের ঈদের পোশাক কিনতে পারায় ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীর ফুটপাতের দোকানগুলোতে। সাধ্যের মধ্যে দাম আর পছন্দমতো পোশাক দুইই পাচ্ছেন এখান থেকে।
দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ক্রেতাদের উপস্থিতিতে জমে ওঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলোর বিকিকিনি।
রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মালিবাগ, মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে এখন টের পাওয়া যাচ্ছে ঈদের কেনাকাটার আমেজ।
এসব এলাকায় জুতা, স্যান্ডেল, থ্রি-পিছ, জিন্সের প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, প্যান্টের পিচ, ঘড়িসহ ঈদের প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হানা দেওয়ায় বেশ বেকায়দাতেই পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন ফুটপাত ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (১৪ জুলাই) গুলিস্তান মোড়ে দাঁড়াতেই শোনা গেলো ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা হযরত আলীর কণ্ঠ। গলা ছেড়ে ডাকছেন ‘হাজার বারশ’ টাকার মাল দুইশ’ টাকায় নেন’।
দোকানের কাছে যেতেই দেখা গেলো বেশ ভিড় জমে আছে। একজনের পর একজন ক্রেতা সামলাচ্ছেন। কাজের ফাঁকে কথা বলতেই হযরত বলেন, আমরা যেসব কাপড় বিক্রি করছি, একই কাপড় এসি (এয়ার কন্ডিশন্ড) শো-রুমে এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বেশি বিক্রির জন্য দামও কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।
প্রায় দুই যুগ ধরে ফুটপাতে কাপড় বিক্রির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এই দাবি করেন।
হযরত বলেন, ফুটপাতে কাপড় কিনতে হলে ক্রেতাদের দেখে-শুনে যাচাই-বাছাই ও পুরনো দোকানিদের কাছ থেকে কিনতে হবে। তাহলে লোকসানের সম্ভাবনা কম থাকবে।
গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত থেকে নাতির জন্য চারটি পোশাক কিনলেন জরিনা বেগম। আজিমপুর থেকে আসা এই ক্রেতা জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ফুটপাত থেকেই কাপড় কেনেন। অনেক সময়ে বড় বড় দোকানে যাচাইও করেছেন। সব মিলিয়ে তিনি দেখেছেন, ফুটপাতেই তাদের মতো ক্রেতাদের জন্য সাধ্যের মধ্যে কাপড় ভালো কেনা যায়।
ঈদে টুপির বাজার সব সময়ই জমে ওঠে। চলতি বছরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আর টুপির বাজার হিসেবে ভালো পরিচিতি রয়েছে গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতের দোকানগুলোর।
টুপির দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি দোকানে প্রায় দুইশ’ থেকে পাঁচশ’ নকশার টুপি রয়েছে। ৫০ থেকে হাজার-বারশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব টুপি।
টুপি ক্রেতা মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই ঈদ উপলক্ষে টুপি কিনি। এবারও এসেছি। নতুন নতুন নকশার টুপিগুলো বেশ ভালোই লাগছে। দামও মোটামুটি ঠিক আছে। তবে একটু যাচাই করে কিনলে লোকসানের সম্ভাবনা কম আছে।
মালিবাগ, মৌচাক এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলোতে দেখা গেলো তরুণ-তরুণীসহ মধ্য বয়সিদের বেশ ভিড়। থ্রি-পিছ, জিন্স প্যান্ট, গেঞ্জি, শার্ট, পাঞ্জাবিসহ প্রয়োজনীয় পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।
তবে ফুটপাতের দোকানিদের বিরুদ্ধে অনেক ক্রেতাদের অভিযোগও পাওয়া গেলো। মিরপুর থেকে আসা জাহিদুল নামের এক ক্রেতা জানান, অধিকাংশ দোকানিরা আগে বলেন পোশাক পছন্দ করতে। তারপর যদি বলা হয় পছন্দ হয়েছে, তখন নিজেদের মতো করে দাম চান। না নিলে ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন কেউ কেউ।
মৌচাক এলাকার ফুটপাতের এক কাপড় ব্যবসায়ী অভিযোগের জবাবে বলেন, সবাই কিন্তু এ রকম নয়। কেউ কেউ বিশেষ করে যারা মৌসুমী ফুটপাত ব্যবসায়ী তারা এ ধরনের আচরণ করেন। ব্যবসা কেমন হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভালোই হচ্ছে। তবে বৃষ্টি হলে একেবারেই ব্যবসা ভালো হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পোশাকের মান ও নকশা ভেদে দোকানিরা পোশাকের দাম চাইছেন। পছন্দ হলে ক্রেতারা কিনছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে বিক্রেতাদের দাম নিয়ে দর কষাকষির দৃশ্যও দেখা গেলো। অনেক ক্রেতা দামের সঙ্গে মিল না হওয়ায় পোশাক পছন্দ করার পরও কিনছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
একে/এএসআর