ঢাকা: রাজধানীর বাইরের স্থানীয় পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। একই বেগুন কেজি প্রতি রাজধানীর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়।
গত মঙ্গলবারের (০৭ জুলাই) এ পরিসংখ্যানটিই বলে দিচ্ছে খুচরা বাজারে বেগুনের দাম নিয়ে কতটা অসম প্রতিযোগিতা।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, খুচরা বাজারে গত এক মাসে বেগুনের দাম বেড়েছে তিনগুণ। আর পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। সবমিলিয়ে বেগুন নিয়ে বেগুন মাতি যেন থামছেই না। দিন যতই যাচ্ছে দাম আর প্রতারণা ততই বাড়ছে।
অভিযোগ রয়েছে, রমজান উপলক্ষ্যে বেগুনের চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। চাহিদা বেশি থাকায় অনেক সময়ে পোকাওয়ালা বেগুনও বিক্রেতারা কৌশলে ক্রেতাদের ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মান ও আকার ভেদে পাঁচ কেজি করে বেগুন বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। ঠিক এক মাস আগে ০৭ জুন একই বাজারে পাঁচ কেজি করে বেগুন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীর মহাখালী, মিরপুর, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বেগুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অথচ জুন মাসের ৭ তারিখে কেজিপ্রতি বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়। এদিকে রমজানে বেগুনের চাহিদা বেড়ে গেলেও সেদিকে যেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে পাওয়া যায়নি বেগুনের চাহিদা, চাষাবাদ ও উৎপাদনের পরিমাণ।
ক্রেতাদের দাবি, শুধু চাহিদা নয় বাজারের অসমতা এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই চড়া দামে রমজান মাসে বেগুন কিনতে হচ্ছে তাদের।
নিয়মিত কাঁচাবাজার করেন মিরপুর এলাকার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিবছরই বেগুন নিয়ে একই রকম ঘটনা ঘটে। সব ভোগান্তি যেন ক্রেতাদেরই। দিন যতই যাচ্ছে বেগুন নিয়ে বিক্রেতারা ততই নড়েচড়ে বসছে। সুযোগ সন্ধানী এসব বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানালেন এই ক্রেতা।
তবে বাজারে যেভাবে বেগুনের চড়া দাম সেই তুলনায় চাষিরা দাম পাচ্ছেন না বলে জানালেন একাধিক বেগুন চাষি। বগুড়া জেলার বেগুন চাষি মামুনুর রশিদ জানান, বগুড়ায় স্থানীয় বাজারে তারা পাইকারি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করছেন।
এ চাষীর দাবি, রোজা উপলক্ষে শহর ও খুচরা বাজারে যে হারে দাম বাড়ে সেই তুলনায় তারা দাম পান না। তবে এবার বেগুনের চাষাবাদ ভালো হয়েছে।
১৮ বছর ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন কাঁচাপণ্যের সঙ্গে বেগুনও বিক্রি করেন মোতালেব হোসেন। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি জানান, রোজার মাসে বেগুনের চাহিদা বেশি থাকায় দাম একটু বেশি হয়। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারের সমন্বয় থাকলে ক্রেতারা বর্তমানের চেয়ে অনেক কম দামে বেগুন কিনতে পারতেন।
এই পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে একাধিক বিক্রেতার কথার মিল খুঁজেও পাওয়া গেলো। কাঁচাপণ্যে পাইকারি বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে বৃষ্টির কারণে এমনিতেই বেগুনের দাম চড়া থাকে। সঙ্গে রোজা যোগ হওয়ায় ক্রেতাদের একটু বেশি দামেই বেগুন কিনতে হচ্ছে। তবে পাইকারি যে দামে বেগুন বিক্রি হয় তার দ্বিগুন দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।
আর খুচরা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, রমজানে চাহিদা বেশি হওয়াই বেগুনের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ। পোকাওয়ালা বেগুন নিয়ে প্রতারণার কথা তিনিও স্বীকার করেন। তবে ক্রেতারা যেন একটু দোকান যাচাই, বাছাই করে পণ্য কিনেন। এ ক্ষেত্রে লোকসান কম হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
একে/আরআই