শাহজাদপুর থেকে: ঈদ মৌসুমকে ঘিরেই শাড়ি বোনার সঙ্গে নিজেদের স্বপ্নও বুনে থাকেন তাঁত শিল্পীরা। কিন্তু মাস খানেকের পরিশ্রমে তৈরি করা এসব শাড়ি ঈদের বাজারে বিক্রি করতে এসেই ধাক্কা খেতে হচ্ছে তাদের।
পরিশ্রম অনুযায়ী দাম পাওয়া তো দূরের কথা, এখন সে শাড়ি লোকসানেই বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের রঙই ম্লান হয়ে যাচ্ছে তাঁতীদের।
বুধবার (১৫ জুলাই) দেশের অন্যতম বৃহৎ তাঁত কাপড়ের বাজার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রবেশ করতেই তাঁত শিল্পী ও কাপড় ব্যবসায়ীদের দেখা গেলো বিষন্ন মনে বসে থাকতে।
শাহজাদপুর উপজেলার গ্যারাদাও ইউনিয়নের তাঁত শিল্পী ঠাণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, দিনের অর্ধেক শেষ হতে চলছে। এখন পর্যন্ত একটা শাড়িও বিক্রি করতে পারিনি। কাপড় বিক্রি করে পরিবারের সবার জন্য ঈদের বাজার করবো। কিন্তু বাজারে এসে যে অবস্থা দেখছি তাতে লোকসান ছাড়া কাপড় বিক্রি করা সম্ভব হবে না।
প্রায় ২০ বছর থেকে তাঁতের সঙ্গে থাকা এ শিল্পী জানান, হাফ সিল্কের এক জোড়া শাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে সাড়ে ছয়’শ টাকা। ক্রেতারা দাম বলছে সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ টাকা।
বাজারের এক পাশে ক্রেতাদের আশায় মুখ মলিন করে বসে আসেন শাহজাদপুর উজেলার দাবাড়িয়া এলাকার তাঁত কারিগর হোসেন আলী।
তিনি জানান, পরিবারের সবার পরিশ্রমেই একটি কাপড় তৈরি হয়। সেই কাপড় যদি লোকসানে বিক্রি করতে হয়, তাহলে কেমন কষ্ট লাগে? তাও আবার সামনে ঈদ! এটা বলে বোঝানো যাবে না। সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বাজার ঘুরে দেখা গেলো, সাড়ে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায় এক জোড়া তাঁতের শাড়ি কিনতে পারছেন ক্রেতারা। তবে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্তও তাঁতের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।
চিকন তাঁতের জোড়া শাড়ি ৯০০ থেকে এক হাজার, সুতির জোড়া শাড়ি ৬০০ থেকে এক হাজার, জোড়া ছাপা শাড়ি ৬০০ থেকে ১২শ’, ফুল ফোটা জোড়া শাড়ি ৯০০ থেকে দেড় হাজার, জোড়া টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি ৬০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দূর্গানগর ইউনিয়ন থেকে আসা তাঁত কারিগর হাবিবুর রহমানও মন খারাপ করে বসে আসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, দেশের বাইরে তাঁতের কাপড়ের বাজার তৈরি করতে হবে। তবেই তাঁতীরা পরিশ্রমের ফল পাবেন। আগে ভারত থেকে ক্রেতারা এসে তাঁতের কাপড় কিনে নিতেন, তাই দামও বেশি পাওয়া যেতো।
৫২ বছর বয়সী তাঁতের কাপড়ের কারিগর আমজাদ হোসেন বলেন, আট জোড়া শাড়ি নিয়ে হাটে এসেছি। বেচাকেনা একেবারেই নেই। আর ক্রেতারা দামও খুব কম বলেছে। হঠাৎ করে এভাবে দাম কমে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়ে যাবো। ঋণ করে তাঁত পরিচালনা করছি। ফলে লোকসান হলেও বিক্রি করতে হবে।
কাপড়ের দাম না পেলে সংসার চালাবো কী করে? প্রশ্ন রাখেন দীর্ঘদিন ধরে তাঁতের সঙ্গে থাকা এই শিল্পী।
শাহজাদপুর তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী আকন্দ বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তাঁত কাপড়ের দাম অনেক কম। এতে লোকসানে পরবেন তাঁত কারিগররা। এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে তাঁত শিল্পের ওপর ধকল যাচ্ছে, এর ওপর এবার দাম পাচ্ছেন না, যোগ করে তিনি।
আশঙ্কা প্রকাশ করে এ ব্যবসায়ী জানান, তাঁতীরা আগের অবস্থানে নেই। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার ব্যবস্থা উন্নতি করা প্রয়োজন। নইলে তারা অন্য পেশায় চলে যাবেন। এতে শঙ্কায় পড়বে দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।
তাঁত ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের বুধ ও রোববার এখানে হাট বসে। তবে ঈদ উপলক্ষে প্রায় প্রতিদিনই এখন বাজারে তাঁতের কাপড় পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৫
একে/জেডএস