ফরিদপুর থেকে: একে একে সব শঙ্কা, অনিশ্চয়তা পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন হবে এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
এখনও অনেক কাজ বাকি তবে এর নির্মাণ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্রদেশে। আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ সেতুর ভূমিকা বলিষ্ঠ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। আর তাই তো সেতুকে ঘিরে মানুষের আগ্রহও কম নয়।
এর নির্মাণকে কেন্দ্র করে মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ঘটছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ করা হচ্ছে শপিংমল। সেতুর কাজ দৃশ্যমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকট ভবিষ্যতে নিজেদের এলাকার উন্নয়নও দেখতে পাচ্ছেন প্রকল্প এলাকার লাখো মানুষ।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এর আশপাশের এলাকাগুলোর জায়গার দাম এক লাফে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ। ঈদের ছুটিতে মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা যায়। তারা বলেন, আগের পদ্মা অঞ্চল আর সেতু নির্মাণ শুরুর পর পদ্মা অঞ্চলের পার্থক্য অনেক। জমির দাম যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে ধাবিত হচ্ছে আধুনিকায়নের দিকে।
‘এক সময় যেসব এলাকায় জমি পানির দরে বিক্রি হতো তা এখন টাকার বস্তা দিয়ে কিনা যায় না’ উল্লেখ করে মাদারীপুরের বাহাদুরপুরের বাসিন্দা অটোচালক জাফর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে এ এলাকার চরের জমি কেউ কিনতে চাইতো না; এখন শতাংশ ৪ লাখ টাকা দিয়েও জমি পাওয়া যায় না। কোনো কোনো জায়গায় ৮/১০ লাখ টাকাও শতাংশ’।
মাদারীপুর জেলার পাচ্চর, শিবচর, চান্দেরচর, বাখরেরকান্দি, সন্যাসীচর, দত্তপাড়া এবং ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার চান্দ্রা, পুলিয়া, মালীগ্রামসহ অনেক এলাকা ঘুরে দেখা যায় জমির দাম অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাদারীপুরের পাচ্চর এলাকায় বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে উপশহর নামে একটি হাউজিং প্রকল্প।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনেকে পৈতৃক সম্পত্তি হারালেও সার্বিক উন্নয়নে তারা অনেক খুশি। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্র ঘুরে কথা হয় জলিল মাতুব্বরের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ শতাংশ জমি হারিয়ে সাত শতাংশ জমি পেয়েছি, তার পরও খুশি স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে। সেতু হলে এখানকার জীবনই বদলে যাবে’।
এক আলাপে পুনর্বাসন বাসিন্দা আব্দুল করিম শরিফ বলেন, ‘আমার ১৭ শতাংশ বসতবাড়ির পুরোটাই প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসাবে এখানে ৮ শতাংশ জমি পেয়েছি। তার ওপর বাড়ি করে থাকতেছি’।
তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে ভালো থাকলেও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য কোম্পানি থেকে যে প্রতিশ্রুতি ছিল তার পুরোটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়া কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। তবে আশার কথা স্বপ্নের সেতু নির্মাণ নিয়ে এখন আর কোনো সন্দেহ, অনিশ্চয়তা নেই। ফলে এ এলাকার মানুষের জীবন বদলাবেই।
নির্ধারিত সময় ২০১৮ সালের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হবে আশা করেন অনেকে। ইতোমধ্যে মূল সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় সেখানকার মানুষ নিজের এলাকার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সে স্বপ্ন যতই বাস্তবায়নের দিকে ততই সেতুর আশপাশের জায়গা জমি এক প্রকার সোনা হয়ে উঠছে এমনই অভিমত স্থানীয়দের।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৫
এজেডকে/আইএ