ঢাকা: ব্যাংক খাতের মোট আমানতের অর্ধেকের বেশি (৫১.৭ শতাংশ) দশটি ব্যাংকের হাতে। দশ ব্যাংকের মধ্যে ৪টি সরকারি মালিকানাধীন ও ৬টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
আর্থিক খাতের বিভিন্ন সূচকের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন (২০১৪) বইয়ের পঞ্চম সংখ্যা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কোনো ব্যাংকের নাম উল্লেখ করা হয়নি প্রতিবেদনে।
রোববার (২৬ জুলাই) বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন গর্ভনর ড. আতিউর রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার হার (সিএআর) ছিল ১১.৪ শতাংশ, যা ন্যূনতম মাত্রা (১০.০ শতাংশ) হতে বেশ কিছুটা বেশি। যেসব ব্যাংকের সিএআর ১০ শতাংশ হতে ১৬ শতাংশের মধ্যে, সেসব ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের একটি বড় অংশ (৭৯.০ শতাংশ) দখল করে রেখেছে, যা আর্থিক স্থিতিশীলতার আরেকটি নির্দেশক।
আলোচ্য বছরে কলমানি রেট এবং আগ্রিম-আমানত অনুপাত স্থিতিশীল থাকায় তারল্যের চাপ সহনীয় মাত্রায় ছিল। কলমানি রেট ৬-৮ শতাংশের ভেতরে এবং আগ্রিম-আমানত অনুপাত ৭০.৯৮ শতাংশ ছিল। অবশ্য বছরের শেষ ভাগে আগাম-আমানত অনুপাত কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে যা নিকট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির নির্দেশক।
ব্যাংকিং খাতের আমানতের শতকরা ৫৬.৪ শতাংশই মেয়াদি আমানত, যা অধিকতর স্থিতিশীল বলে বিবেচনায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নির্দেশ করছে। আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের বর্তমান স্থিতি ৩৬৩.৬ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সাল নাগাদ ১০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
তবে, বর্তমান ফাণ্ড ২৬টি ব্যাংকের (আমানতের দিক হতে সর্বনিন্ম) আমানত দাবি পরিশোধে সক্ষম।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে শ্রেণিকৃত ঋণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে (২০১৩ এর ডিসেম্বরে ৮.৯ শতাংশ)। তবে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর উচ্চহারে প্রভিশন সংরক্ষণ ব্যাংকিং খাতের অধিকতর অভিঘাত শোষণ ক্ষমতা বাড়ার নির্দেশক।
শ্রেণীকৃত ঋণের সঙ্গে সংরক্ষিত প্রভিশন সমন্বয় করা হলে প্রকৃত শ্রেণীকৃত ঋণের হার দাঁড়ায় ৪.২ শতাংশ, যা মোট শ্রেণীকৃত ঋণের অর্ধেকেরও কম। ঋণ ঝুঁকিকে ব্যাংকিং খাতের প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা মোট ঝুঁকিভার সম্পদের শতকরা ৮৫.৭ ভাগ। ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানসমূহের রেটিং এর স্থিতিশীলতা এবং সামান্য নিন্মমুখী স্থানান্তর ব্যাংকিং খাতের অধিকতর অভিঘাত শোষণ ক্ষমতা নির্দেশ করছে।
অভিঘাত যাচাইয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক এবং বর্তমানে ব্যাংকগুলো অস্বাভাবিক তারল্য সংকটে পড়লেও বিদ্যমান তারল্যাবস্থা নিয়ে ৫ কর্মদিবসের চেয়ে বেশি সময় ধরে স্থিতিস্থাপক থাকবে যা আন্তর্জাতিক ভাবেও গ্রহণযোগ্য মাত্রা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৪টি খাত উল্লেখ করে খাত ভিত্তিক ঋণের চিত্র তুলে ধরেছে। সেখানে দেখা গেছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ৬৮ দশমিক ৮১ শতাংশ কেন্দ্রীভূত হয়ে রয়েছে পাঁচটি খাতে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ রয়েছে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা খাতে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে বৃহৎ শিল্পে। শীর্ষ পাঁচটি খাতের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আমদানি অর্থায়নে রয়েছে ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং কৃষি খাতে রয়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। আবাসন, রফতানি, সেবাসহ ১৮টি খাতে রয়েছে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর অন্যান্য খাতে রয়েছে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেশে কার্যরত ৫৬টি ব্যাংকের ডিসেম্বর ভিত্তিক খেলাপি ঋণের চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৫১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের ৫৩ দশমিক ৬০ শতাংশই রয়েছে পাঁচটি ব্যাংকে। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, বেসিক, জনতা, অগ্রণী ও বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এসময়ে শীর্ষ ১০ ব্যাংকে রয়েছে ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে ব্যাংকগুলোর আয় অনেক কমে গেছে। গত বছর প্রতি ১০০ টাকা সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় এসেছে মাত্র ৭০ পয়সা। আগের বছর যা ৯০ পয়সা ছিল। আর প্রতি ১০০ টাকা মূলধনের বিপরীতে আয় হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা। আগের বছর যা ১০ টাকা ৭০ পয়সা ছিল।
সামগ্রিক ব্যাংক খাতের তুলনায় আয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া গত বছর শেষে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল পাঁচটি ব্যাংকের কাছে। শীর্ষ ১০টি ব্যাংকে ছিল ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটিকে ঝুঁকির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো নতুন ব্যাংকের ওপর একটি অধ্যায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ব্যাংক খাতে এসব ব্যাংকের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে আমানত ও ঋণের অংশীদার হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৫
এসই/এসএইচ