ঢাকা: প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়ক। এসব সড়কের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার।
আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করতে এসব সড়কের উপর সমীক্ষা চালিয়ে নকশাও প্রায় চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।
তবে বর্তমানে দেশের এক কিলোমিটার সড়কও এশিয়ান হাইওয়ের মানের নেই। তারপরও দেশের ৬০০ কিলোমিটার সড়ককে এশিয়ান হাইওয়ে, বিবিআইএন ও সাসেক এর আওতায় আনার মহাউদ্যোগ হাতে নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, পর্যায়ক্রমে ৮টি করিডোরে দেশের ৬০০ কিলোমিটার সড়ক এশিয়ান হাইওয়ের মানের করা হবে। সব সড়ক চারলেনে রূপান্তর করা হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা এ বিষয়ে একটি সমীক্ষাও শেষ করেছি। পর্যায়ক্রমে আমরা নানা ধরনের প্রকল্পের আওতায় সড়কগুলো এশিয়ান হাইওয়ের মানের করতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের অনেকগুলো মান রয়েছে। আমরা এগুলোকে ক্লাস ওয়ান মানের সড়কে পরিণত করবো। প্রথমে রংপুরের পাগলাপীর –ধালীয়া-বারখাতা হয়ে ভারতে প্রবেশের সড়ক তৈরি করবো। এতে সড়কপথে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভূটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত হবে। এর পরে ‘রংপুর -সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশের সড়কের কাজও দ্রুত সময়ে শুরু করবো। এ বিষয়ে প্রকল্পও হাতে নিতে যাচ্ছি। এ সড়কের মোট আয়তন ১০৫ কিলোমিটার। এতে ভূটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসার ঘটবে। ’
৬০০ কিলোমিটার সড়কের অর্থায়ন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আমরা ধাপে ধাপে এশিয়ান হাইওয়ে যুক্ত হবো। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়নে এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও ফ্রান্স অর্থায়ন করতে চেয়েছে। আমরা পাঁচ বছর পর এই উদ্যোগ নিয়েছি। ধীরে ধীরে এশিয়ান হাইওয়ের কাজ বাস্তবায়িত হবে। তবে কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে তা সময় বলে দেবে।
এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়ক উন্নয়নে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া। ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো দ্রুত উন্নয়ন করছে।
যেভাবে যুক্ত হচ্ছে ৮ করিডোরের ৬০০ কিলোমিটার সড়ক
প্রথম করিডোর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারতে প্রবশে করবে করিডোরটি। প্রথম করিডোরের দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এই রুট ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দ্বিতীয় করিডোর: রংপুর -সৈয়দপুর-বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এর মোট দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে এই করিডরটি অন্যতম অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করতেও রুটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তৃতীয় করিডোর: এর মোট দৈর্ঘ্য মাত্র ১০ কিলোমিটার। এটি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া-পায়রা বন্দরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ মহাসড়ককে সংযুক্ত করবে।
চতুর্থ করিডোর: এই রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ কিলোমিটার। সিলেটের চরখাই-শেওলা-সূত্রাকান্দি হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এই রুট আঞ্চলিক ব্যবসা প্রসারে অন্যতম অবদান রাখবে।
পঞ্চম করিডোর: এটি চট্টগ্রাম একসেস রোড। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ কিলোমিটার। এই করিডোরের মাধ্যমে সমুদ্র পথে বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
৬ষ্ঠ করিডোর: এই রুটটি হচ্ছে সাভার নবীনগর থেকে পাটুরিয়া রোড পযর্ন্ত। এর মোট দৈর্ঘ্য ৫৮ কিলোমিটার। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারে অন্য করিডোরের রুটকে সহায়তা করাই এ রুটের অন্যতম উদ্দেশ্য। সরাসরি এই রুটটি অন্যদেশের সঙ্গে যুক্ত নয়।
সপ্তম করিডোর: এই রুটের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এটি নাটোর-বনপড়া-ঈশ্বরদী-পাকশি-কুষ্টিয়া হয়ে ঝিনাইদহে মিলিত হয়েছে। এটিও অন্য রুটের সহায়ক হিসেবে আঞ্চলিক যোগাযোগে অন্যতম অবদান রাখবে।
অষ্টম করিডর: এর মোট দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। এটি রংপুরের পাগলাপীর-ধালীয়া-বারখাতা হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এই করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ উন্নত হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র আরও জানায়, টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স ফর সাব-রিজিওনাল রোড ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটির আওতায় এশিয়ান, হাইওয়ে সাসেক ও বিসিআইএম করিডরভুক্ত ১ হাজার ৭৫২ কিলোমিটার সড়কের উপর সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এই বিশাল করিডোরে নতুন করে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়কের ৬০০ কিলোমিটার পথ যুক্ত হতে যাচ্ছে।
এডিবি’র পরামর্শ অনুযায়ী, সমীক্ষা প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এতে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ। এ প্রকল্পের আওতায় ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেইল্ড ডিজাইন করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ বাবদ ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া অফিস ভাড়া, যানবাহন খরচ, ইন্টারনেট বিল বাবদ এক কোটি ৮৭ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
এশিয়ান হাইওয়েকে কিভাবে মানসম্মত করা যায় মূলত সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
প্রকল্পের সমীক্ষায় দেখো গেছে, এশিয়ান হাইওয়ে মানের সড়কে অযান্ত্রিক ও ধীরগতির যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। এগুলোর জন্য পৃথক সার্ভিস সড়কও থাকে। প্রাইমারি সড়কের দুই পাশে থাকে নিরাপত্তামূলক বেষ্টনী বা সীমানা প্রাচীর, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলতে পারে। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে ন্যূনতম ৫০ মিটারের মধ্যে কোনো জনবসতি বা স্থাপনা রাখা যাবে না। এসব সড়কের পাশ দিয়ে পথচারী চলাচল বা আড়াআড়ি সড়ক পারাপার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, এশিয়ান হাইওয়ে এশিয়ার অন্য দেশের মতো উন্নত করতে না পারলে কাছাকাছি যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ভর করবে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তার উপর। প্রাথমিকভাবে দ্বিতীয় ও অষ্টম করডোরকে এশিয়ান হাইওয়ে মানের সড়কে রূপান্তরের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। এতে এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৫
এমআইএস/বিএস/জেডএম