ঢাকা: চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৪ হাজার ৮শ’ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৬শ কোটি টাকা বিতরণ করবে।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ২ হাজার ৯শ’ ৮০ কোটি, বিদেশি ব্যাংক ৩শ’ ৯৩ কোটি, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬ হাজার ১শ’ ১৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে।
এর বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ৩০ কোটি ও বিআরডিবিকে ৬শ’ ৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে হবে।
গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার বেশি বিতরণ করা হয়েছে ৪শ’ ২৮ কোটি টাকা।
চলতি বছর বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণের ২ শতাংশ এবং নতুন ৯টি ব্যাংককে ৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হবে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না তাদেরকে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার অনার্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলভাবে জমা করতে হবে। উক্ত জমার ওপর ব্যাংক কোনো সুদ পাবে না।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রান্তিক, বর্গা চাষি ও নারী কৃষকসহ সব ধরনের কৃষককে এই ঋণ দিতে হবে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না তাদের জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। ।
সোমবার (২৭ জুলাই) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গভর্নর বলেন, সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে এবং সংশ্লিষ্টদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
গর্ভনর বলেন, গত অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচির মূল দিকগুলো ঠিক রেখে কয়েকটি নতুন বিষয় এ নীতিমালায় সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি ও পল্লী ঋণের আওতা বৃদ্ধি, পল্লী এলাকায় ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণে কৌশলগত পদ্ধতি গ্রহণ, কৃষকদের ব্যাংকমুখি করা, তথা আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তিকরণ, আমদানি বিকল্প ফসল চাষে বাড়তি উৎসাহ প্রদান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া, নেপিয়ার ঘাস, ক্যাপসিকাম চাষ, আম ও লিচু চাষে ঋণ প্রদানে নির্দেশনা, উদ্ভাবিত নতুন ফসল ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান ও শুভঙ্কর সাহা, কৃষি ঋণ ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক এবং তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। যা এখাতের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৩ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি পেয়েছেন ১১ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং ২ লাখ ৫৬ হাজার বর্গাচাষি পেয়েছেন প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা ঋণ। আর ২ লাখ ৬৬ হাজার নারী পেয়েছেন ৯০১ কোটি টাকা ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির আওতায় গত অর্থবছরে একটি অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গাচাষিকে ৪৫০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোও সরাসরি বর্গাচাষিদের যথেষ্ট ঋণ প্রদান করছে। গত অর্থবছরে আদায়যোগ্য ঋণের ৭০ শতাংশ আদায় হয়েছে যা আগের অর্থবছরে তুলনায় বেশি। এবছর নতুন করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককেও (বিডিবিএল) কৃষি বিরতণ করতে হবে।
গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, যে কেউ আমাদের হটলাইন (১৬২৩৬), ফেসবুক, টেলিফোন, ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগে সরাসরি এবং গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ বিভাগে কৃষি ঋণ বিষয়ক যে কোনো অভিযোগ জানাতে বা তথ্য পেতে পারবেন।
এদিকে কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নীতিমালায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
এসই/জেডএস