ঢাকা: ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একটি মন্ত্রণালয় ও ১০টি বিভাগে সর্বনিম্ন হারে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছে। এগুলো হলো- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯১ শতাংশ। এর মধ্যে একটি মন্ত্রণালয় ও ১০টি বিভাগের মধ্যে কয়েকটি ৫০ শতাংশ পার করতে পেরেছে। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি’র ৫০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
এতে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি’র জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৭৭ হাজার ৮৩৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৭১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। স্থানীয় মুদ্রায় বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্য ছিল ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যার ২২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরএডিপি বাস্তবায়ন হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি টাকা, যার খরচ হয়েছে মাত্র ৩ কোটি টাকা।
এছাড়া অর্থ বিভাগ ৬০ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৫৮ শতাংশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ৬৯ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৫৪ শতাংশ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৬৬ শতাংশ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৬৩ শতাংশ, সুপ্রিম কোর্ট ৫৫ শতাংশ, জাতীয় সংসদ সচিবালয় ৫৪ শতাংশ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ৬৫ শতাংশ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৬৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
একটি মন্ত্রণালয় ও ১০টি বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নে এ হতাশজনক অবস্থা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কিছু প্রকল্প আছে দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব কারণে একটি মন্ত্রণালয় ও ১০টি বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার কম। আমি দেখেছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প ২০০৬ সালে শুরু হয়েছে, সেটি আবার ২০১৫ সালে এসে সংশোধন করতে চাইছে। এসব প্রকল্প আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। এসব প্রকল্প আমার দরকার নেই। আমি প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে আনবো। যেসব প্রকল্প দীর্ঘদিন ঝুলে আছে, সেগুলো বাদ দিয়ে দিবো। দরকার হলে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করবো। আমার বিশ্বাস, পরবর্তী বছরে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারবো।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমি বলেছিলাম, শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু পারিনি। এডিপি’র ৯১ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমার টার্গেট ছিল শতভাগ বাস্তবায়ন করা। কিন্তু পারিনি দু’টি কারণে। প্রথম কারণ-দেশে তিন মাস রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল। দ্বিতীয় কারণ- স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আরএডিপি’র বাস্তবায়ন হার তুলে ধরা হয়। এতে দেখা গেছে, কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শতভাগ এবং এর থেকে বেশি আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তাদের বাস্তবায়ন হার ১১১ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ে মোট বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু খরচ হয়েছে ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। এ মন্ত্রণালয়সহ মোট ১০টি মন্ত্রণালয় শতভাগ ও তার থেকে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে। যেমন, বিদ্যুৎ বিভাগ ১০১ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে। এ বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা কিন্তু খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।
এছাড়া, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১০০ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ১০৬ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ১০২ শতাংশ, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১০০ শতাংশ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০১ শতাংশ ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১০১ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
এমআইএস/আরএম