ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৫
প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: টেকসই অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ। তাই নির্বাচিত খাতে বিনিয়োগ করার বিকল্প নেই।

সেটা করতে পারলে একদিকে ঋণের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ধীরে ধীরে কমে আসবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার।

আর বাজেটের নির্ধারিত দেশজ উৎপানে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে। বেসরকারি খাতের এ বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব খাতে গেলে তাতে কমবে আর্থিক ঝুঁকি।

চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথমার্ধের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আগের কয়েকটি মুদ্রানীতির প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এবারের মুদ্রানীতিকে প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি বলে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আতিউর রহমান মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্রে এসব কথা বলেন। অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজেমী, ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকরাসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি জুন পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ১৩ দশমিক ৬ শতাংশের মতো অর্জিত হবে। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত ১৭ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে অনেকটা নিচে মে পর্যন্ত ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ।

জুনে তা কিছুটা বাড়লেও ১১ শতাংশের নিচে থাকবে। বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধার অপ্রতুলতা, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি মন্দা এবং দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘ্নের প্রেক্ষাপটে এমন হয়েছে বলে  মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাজেটে দেশজ উৎপাদনে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মাত্রা ধরে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রক্ষেপন করা হয়েছে। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ এবং জুন’১৬ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে।

গর্ভনর বলেন, নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় পরিমিত রাখলেও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট এবং খাদ্য ও জ্বালানি বহির্ভূত কোর মূল্যস্ফীতিতে নিম্নগামী প্রবণতা সুস্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নীতি সুদহার অর্থাৎ রেপো, রিভার্স রেপো সুদহার সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় নামিয়ে আনার বিবেচনায় আমরা দ্বিধান্বিত হবো না।

ব্যাংক ঋণের গুণগত মান রক্ষা করার জন্য নির্বাচিত খাতে ঋণ দেয়া হবে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উৎপাদন উদ্যোগগুলোর অর্থায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারের সঞ্চয় যোগান বর্ধিত মাত্রায় সঞ্চালিত হচ্ছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক এসব অর্থায়ন উদ্যোগ এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া অবলম্বন প্রকল্পের অর্থায়নের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুন:অর্থায়ন সহায়তা ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছে।

নতুন ২০১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিবান্ধব অর্থায়নের এ সমর্থন সূত্রগুলো সচল থাকার পাশাপাশি ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের (প্রায় চার হাজার কোটি টাকা) দুটি অর্থায়ন সূত্র যোগ হবে। প্রথমটি হলো অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি উভয় বাজারের জন্য উৎপাদনমুখী প্রকল্পগুলোর মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে আহরণ করা ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল।

আর দ্বিতীয়টি হলো রপ্তানিমুখী বস্ত্র, পোশাক ও চামড়া শিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া অবলম্বনের অর্থায়নের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব সূত্রের ২০০ মিলিয়ন ডলার পুন:অর্থায়ন সহায়তা।

প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বেশি ঋণ দেয়ার চেয়ে মানসম্পন্ন ঋণের দিকে নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে একইসঙ্গে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।

এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই ঋণের সুদের হার কমে আসবে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়ক ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ছয় মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনালে ধরা হয়। মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করতে অন্যান্য বারের মত এবারও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যাংকার, প্রাক্তন গভর্নর, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট, প্রাক্তন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৫
এসই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।