আগরতলা থেকে ফিরে: ‘নিত্যপণ্যের চাহিদা যোগানের ক্ষেত্রে ভারতের ত্রিপুরারাজ্য অনেকটাই বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। কেননা ত্রিপুরার কাছের জায়গা আসাম এবং কলকাতা থেকে পণ্য আনতে যথাক্রমে ১০ ঘণ্টা এবং ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে।
অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে আমাদের রাজ্যটিতে পণ্য আসতে চার ঘণ্টারও কম সময় লাগে। তাই আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। ’
আগরতলায় সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে একথা বললেন আগরতলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর সভাপতি এমএল দেবনাথ।
তিনি জানালেন, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব বেশি নয়। একেবারে গা ঘেঁষে বাংলাদেশ। তাই দূরত্ব বেশি না হওয়ায় সময় লাগে কম। পরিবহন খরচও ততটা নয়।
এমএল দেবনাথ জানালেন, বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, পাটজাত ও প্লাসটিক পণ্য, কোমল পানীয়, ঢেউটিন, চিটাগুড়, মাছ, শুটকি ইত্যাদি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রাণ’-এর পণ্যের চাহিদা তাদের রাজ্যে বেশি। প্রাণের বিস্কুট, চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্লাসটিক পণ্য তাদের রাজ্যের বাজার ব্যাপকভাবে দখল করে রেখেছে। প্রাণের পণ্য ওই রাজ্যে প্রথম আমদানি করা হয় ১৯৯৭ সালের দিকে।
তবে নব্বুই-এর দিকে ইলিশ যেতো বাংলাদেশ থেকে। এরপর অন্যান্য মাছও আমদানি শুরু হয়। পাহাড়বেষ্টিত ত্রিপুরায় নদী-নালা-খাল-বিল কম হওয়ায় মাছের যোগান কম। রাজ্যের জনসংখ্যা পঁয়ত্রিশ লাখ। অধিকাংশই বাঙালি। বাকি জনগোষ্ঠী আদিবাসী। আর সারাবিশ্বে বাঙালির পরিচয় তো ‘মাছে ভাতে বাঙালি। ’
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের অন্ধ্র ও অন্যান্য রাজ্য থেকেও মাছ তাদের রাজ্যে আসে বলে জানালেন এমএল দেবনাথ।
ত্রিপুরার পরেই ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য ছয় রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য শুরু হয়। প্রথম দিকে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আসা-যাওয়া শুরু হয়। ত্রিপুরা থেকে পরে তা অন্য রাজ্যে পাঠানো হয়। ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচটি সীমান্ত দিয়ে বর্তমানে আমদানি-রফতানি হচ্ছে।
তবে আখাউড়া-আগরতলা দিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের কারণে এটি এখন লাভ করেছে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের মর্যাদা। কেননা শিল্প-কলকারখানার মতো অবকাঠামো খাতে পিছিয়ে থাকা আসাম ও ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পুবের ‘সেভেন সিস্টারস’ বলে খ্যাত সাত রাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য বাজার লাভ করেছে।
বাংলাদেশে থেকে প্রতি বছর সাড়ে তিনশো কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয় ত্রিপুরায়। ত্রিপুরা থেকে বছরে এক কোটি টাকার পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হয় বলে জানান তিনি। অবশ্য সিলেটের তামাবিল ও মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি দিয়েও পণ্য আমদানি-রফতানি হচ্ছে। মেঘালয় হয়ে অন্য রাজ্যগুলোতে ওই পণ্য যাচ্ছে।
এমএল দেবনাথ বলেন, তাদের সাত রাজ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো শিল্প-কলকারখানা নেই বলে তেমন কোনো পণ্য উৎপাদিত হয় না বললেই চলে। সাত রাজ্যের একটি থেকে অন্যটির গড়পড়তা দূরত্ব ৪/৫শ’ কিলোমিটারের কম নয়। আগরতলা থেকে রেলপথে কলকাতার দূরত্ব ১৭০০ কিলোমিটার। পাহাড়ি রাস্তা বলে ট্রাক বা পণ্যবাহী লরি চলাচল করতে পারে না।
প্রাণ ছাড়াও আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ এবং আলআমিনসহ আরও বেশ কিছু বাংলাদেশি কোম্পানি তাদের পণ্য রফতানি করে থাকে। মূলত: এ কোম্পানিগুলো মূলত জুস, বিস্কুট-পাউরুটি রফতানি করে। তবে এখন সিমেন্ট বেশি আমদানি হয় বাংলাদেশ থেকে। ব্যাটারিও আসে।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার মূল শহর থেকে আখাউড়া সীমান্ত মাত্র তিন কিলোমিটার। রিকশাভাড়া ২৫/৩০ রুপি। অটো (সিএনজি) ভাড়া ৫০ রুপি। স্বভাবতই ঢাকা-আগরতলা এতো কাছে বলে পণ্য পরিবহনে খরচও কম পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
জেএম/