ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোবাইল ব্যাংকিং

স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক লেনদেনে বিকাশেই আস্থা

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৫
স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক লেনদেনে বিকাশেই আস্থা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘মানুষ এখন সহজ ও সুবিধাজনকভাবে অর্থিক লেনদেনে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। পকেটে টাকা থাকার চেয়ে হাতে মোবাইল থাকা অধিক নিরাপদ।

এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি যেমন নেই, তেমনি বিপদে-আপদে, প্রয়োজনে হাতের মোবাইলটিই হয়ে উঠছে ব্যাংক। সারা দেশব্যাপী ছড়ানো এ সেবা; তাইতো বলা যায় মানুষের ব্যাংক এখন পকেটে পকেটে। একজন গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করার সময় রাজধানীর মিরপুরের বিকাশ এজেন্ট মো. রাজু এসব কথা বলছিলেন। কথা গুছিয়েই বলেন তিনি। বাস্তবতায় দীর্ঘ বছর খানেক যা দেখেছেন তাই বলে গেলেন অনর্গল।
 
মূলত রডের দোকান। এর পাশাপাশি বিকাশ এজেন্ট হয়েছেন জনপ্রিয়তার কারণে। চাহিদা আছে বলেই এজেন্ট তিনি- এমনই বক্তব্য দিলেন। এতে সাইড বিজনেস হিসেবে বেশ জমেছে তার। এও জানালেন, বিকাশ এজেন্ট হিসেবে প্রাপ্ত কমিশনে উঠে আসে তার দোকান ভাড়া। তিনি জানান, সেই ২০১১ থেকে বিকাশের যাত্রা শুরু হলেও নিজ অভিজ্ঞতায় গত এক বছরে মানুষের মধ্যে বিকাশ ব্যবহারের প্রবণতা দেখেছেন, যা ক্রমবর্ধমান। বিকাশে কেনাকাটায় দিন-দিন বৃদ্ধির হার অনুধাবন করেছেন, যা দৈনন্দিন জীবনেও প্রবাহিত। এটিকে একটি স্বচ্ছ ও ঝামেলাহীন সেবা বলছেন মো. রাজু। তার মতে গ্রাহকরাও যেমন খুব সহজে এর প্রতি আস্থা রেখেছেন-রাখছেন, ঠিক তেমনি তার মতো বিকাশ এজেন্টরাও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিয়ম-কানুন মেনে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, একজন বিকাশ এজেন্ট হিসেবে তার প্রধান কাজ হচ্ছে তিনটি- গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া, তার অ্যাকাউন্টে ক্যাশ ইন এবং ক্যাশ আউট করে দেওয়া। আর এর সবগুলো কাজের জন্য এজেন্টকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না।

‘বিকাশ এজেন্ট হিসেবে আমি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিকাশ প্রদত্ত নিয়ম মেনে ব্যবসা করি। বিকাশ আমাদের মধ্যে নিয়মিতভাবে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সংক্রান্ত সচেতনাতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। আমাদের নিয়মিত ট্রেড লেটার, ট্রেনিং এবং মাঠকর্মীদের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করা হয়। যা একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখেছি গত এক বছরে’।

সবুজের প্রসঙ্গটা ভিন্ন। নাটোর থেকে এসে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তিনি। একটি বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে বাড়ি থেকে পাঠানো টাকা ক্যাশ আউট করছিলেন তিনি। বিকাশ ব্যবহারের উদ্দেশ্য কী তার, শুধুই কি গ্রামের বাড়ি থেকে টাকা পাওয়ার জন্য? উত্তরে তিনি জানালেন, বিকাশের সেবা এখন শুধুমাত্র টাকা আদান-প্রদানের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নেই। যদিও তিনি প্রথমে আদান-প্রদানের প্রয়োজনেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন।
 
সবুজ বলেন, সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে বিকাশ মেন্যুতে। সময়ের সঙ্গে বিকাশ অনেক আপডেট। এর অন্যতম একটি সেবা ‘বাই এয়ারটাইম’। যার মাধ্যমে একজন বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী নিজের মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ করার পাশাপাশি অন্যেরটাও করতে পারছেন। দেশের শীর্ষ চার মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং এয়ারটেলের বিকাশ’র গ্রাহকরা ‘বাই এয়ারটাইম’ সেবার আওতায় রয়েছেন। শুধু তাই নয় পণ্য কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, ট্রাক্সি ক্যাবের ভাড়া, হাসপাতালের বিল দেওয়ার মতো কাজ করা যাচ্ছে একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে।
 
সময়ের সঙ্গে বিকাশ তথা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবাগুলোর পরিধি আরও বাড়ছে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এগুলোকে সাদরে গ্রহণ করছেন। এ বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের মহা-ব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মূলত নিয়ম-নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করাতেই এ সেবা গ্রাহকের আস্থা পেয়েছে। দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাফল্য ও সেবা উত্তর-উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যথা নিয়মে, যথা পদ্ধতিতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সচেতন বলেই মোবাইল ব্যাংকিং মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় হচ্ছে।
 
কেউ কেউ এ সেবাটি অপব্যাবহার করছে কিনা এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই কঠোর। এ সেবাটিতে আমাদের কাছে যে কোনো অভিযোগই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ বিভাগ রয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং মনিটরিংয়ে আলাদা সেল, হট-লাইন রয়েছে- যেখানে ফোন করে একজন গ্রাহক তার যে কোনো বক্তব্য জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত পারি এর প্রতিকারে কাজ করি।
 
নিয়ম-নীতি যথাযথভাবে মেনেই নিজেদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এটিই বর্তমানে বিপুল পরিমাণ গ্রাহক আস্থার প্রধান নিয়ামক বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহা-ব্যবস্থাপক।

এ বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী বিকাশ’র হেড অব মার্কেটিং আসিফ আহমেদ বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন টাকা আদান-প্রদান ছাড়াও অনেক কিছুই করা যাচ্ছে। ফলে মানুষের নিজস্ব চাহিদা বাড়ছে। তারা আগ্রহী হচ্ছেন। বিকাশ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহক সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সারাদেশে বিকাশের লাখের অধিক এজেন্ট রয়েছেন। তারা মাঠ পর্যায়ে নিয়ম-নীতি মেনে মানুষকে সেবা দিচ্ছেন।

আসিফ বলেন, বিষয়টি যেহেতু আর্থিক, সেহেতু এক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এছাড়া আমরাও ক্লোজ মনিটরিং করি। এতে কোনো অনিয়ম পেলে এজেন্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, চলতি বছরের (২০১৫ সাল) এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮৬ লাখ। এ মাসে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২০ কোটি টাকা। এতে গ্রাহক সংখ্যা এবং লেনদেন উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৫
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।