ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৫
বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ

ঢাকা: বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম সহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান দল।

দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনার প্রতিবেদনগুলো জমা দেয় দুদকের অনুসন্ধান টিম।

অর্ধ শতাধিক পৃথক প্রতিবেদনে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাংকটির সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়।  

মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিকেলে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগ-১ বিভাগের ডেস্ক কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদনগুলো দাখিল করে অনুসন্ধান টিম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো অনুমোদনের জন্য কমিশনে দাখিল হবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র। তবে প্রতিবেদন এখনও দেখেননি জানিয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিবেদন এখনও কমিশনে আসেনি। কমিশনে পেশ হতে হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। ’

দুদক সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২৩, শান্তিনগর শাখার ঘটনায় ২১, প্রধান শাখার ঘটনায় ৬ এবং দিলকুশা শাখা থেকে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৬জনের বিরদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। ৫৬ জনের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছাড়াও জালিয়াতির মাধ্যমে যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছেন সেগুলোর এমডি- চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা রয়েছেন।

মামলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো.সেলিম, ডিএমডি এমদাদুল হক, ডিএমডি ফজলুল সোবহান,ডিএমডি ও প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির সদস্য সচিব এ মোনায়েম খান, ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ, প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান ও শাহজাহান মোল্লা, উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খান ইকবাল হাসান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান, বেসিক ব্যাংক শান্তিনগর শাখার ব্যবস্থাপক মো. জালাল উদ্দিন, এজিএম এসএম আনিসুর রহমান চৌধুরী, সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী, গুলশান শাখার শাখা ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, এ শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ এস এম জাহিদ হাসান প্রমুখ। এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময়ে ব্যাংকটির বাকি কর্মকর্তাদের নাম পাওয়া যায়নি।

এছাড়া অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওয়েল সোয়েটার্স, মদিনা হার্ডওয়্যার স্টোর, সোহেল ট্রেডিং এজেন্সি, টোকিও এজেন্সি, টোকিও নিট গার্মেন্টস, ভারনারেবল এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, ক্লাসিক এক্সেসরিজ, ডেলটা সিস্টেমস, এআরএসএস এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ, এবি ট্রেড লিংক, মেসার্স আর কে ফুড লিমিটেড, মেসার্স নিমেক্স লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের শাখাগুলোর মধ্যে গুলশান শাখার দেওয়া ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, শান্তিনগর শাখা এক হাজার ৫২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং দিলকুশা শাখা দিয়েছে ৯২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এই তিন শাখায় অতি দ্রুততার সঙ্গে ঋণ ছাড় করা হয়েছে। ঋণের বিপরীতে কোনো উল্লেখযোগ্য জামানতও রাখেনি কর্তৃপক্ষ। বরং তালিকার বাইরের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসব জামানতের অভিহিত মূল্য (ফেস ভ্যালু) বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, যাতে বেশি করে ঋণ পাওয়া যায়।

২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংক দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে এ কেলেঙ্কারির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকটির শাখাগুলোতে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ব্যাংকটির ওপর বিস্তারিত পরিদর্শন চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ এবং পরে অর্থ আদায়ে উদাসীনতার কারণে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে সরাসরি বেসিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত। আবার এসব ঋণ নিয়ে তার সদ্ব্যবহার করেনি বলেও দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুই বছর ধরে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি নির্দেশও মানেনি। বরং ঋণের বিপরীতে সুদ হিসেবে একটি পয়সা আয় না হওয়া সত্ত্বেও কাগজে-কলমে বিশাল আয় দেখিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৫
এডিএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।