যশোর: খরার কারণে গতবছর পানি কিনে পাট জাগ দিতে হয়েছে যশোরের চাষিদের। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে খাল-বিল পানিতে ভরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকরা কেউ পাট জাগ দিচ্ছেন, কেউবা জাগ(পঁচানো) হওয়া পাটের আঁশ পাটকাঠি থেকে ছাড়াচ্ছেন। আবার কেউ কাঠি থেকে ছাড়ানো আঁশ ধুয়ে তা শুকানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
টানা বৃষ্টিতে নিচু এলাকার পাটের জমিতে জমেছে কোমর পানি। কিছু কৃষক খরচ বাঁচাতে ওই জমি থেকে পাট কেটে সেখানেই জাগ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এবার পাট বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি পাট মৌসুমে যশোর সদর উপজেলায় ১৬০০ হেক্টর, কেশবপুরে ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর, মণিরামপুরে ৪ হাজার ৫২৫ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৮০ হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ৩০ হেক্টর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমি মিলে মোট ২৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, যশোরে এ বছর ২৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর উৎপাদিত পাটের প্রায় শতকরা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ইতোমধ্যে কেটে জাগ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (০৮ আগস্ট) যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খরিচাডাঙ্গা, লেবুগাতী, সাড়াডাঙ্গি ও সামান্দারতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকার পাট চাষিরা পচানো পাটের জাগ তুলে আঁশ ছাড়িয়ে পাটকাঠি বের করছেন। তারপর তা ধুয়ে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এসব এলাকার প্রতিটি রাস্তার ধারে বাঁশের খুঁটি দিয়ে মাচা তৈরি করে ও ব্রিজের দু’ধারে পাটের আঁশ শুকাতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পাট চাষিদের বাড়ির উঠানেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে।
স্থানীয় খরিচাডাঙ্গা এলাকার কৃষক ধীরেন মল্লিক ও নিতাই মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, চলতি পাট মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়া ও শেষের দিকে বৃষ্টির পানিতে পাটক্ষেত ডুবে যাওয়ায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবুও দাম থাকলে অন্য ফসলের তুলনায় পাটে লাভ হবে।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার কড়িয়াখালী গ্রামের পাটচাষি জামির মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, গেল বোরো মৌসুমে ধান চাষে কৃষকের চরম লোকসান হয়েছে। তবে, পাটের ফলন ও বর্তমান বাজার দর দেখে ভালো লাভের স্বপ্ন বুনছে কৃষক।
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে প্রতিবিঘা পাটচাষে সর্বোচ্চ ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ করে সর্বনিম্ন ১০ মণ পাট পাবে কৃষক। এতে বর্তমান বাজার অনুযায়ী ১৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সাড়ে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হবে। এছাড়াও পাটকাঠি বিক্রি হবে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। ফলে চাষের সব খরচের দায়-দেনা মিটিয়েও লাভের মুখ দেখবে কৃষক।
কেশবপুরের পাঁজিয়া এলাকার আবুল মোড়ল নামে একজন পাটচাষি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছরগুলোতে পাটের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা চাষ কমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে, গত বছরে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দর হওয়ায় আবারও পাট চাষ শুরু করে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
যশোরের কেশবপুর, মণিরামপুর ও শার্শা এলাকার কয়েকজন দিন মুজুরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি পাট মৌসুমে প্রতি আঁটি পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়াতে দিনমুজুরকে দেওয়া হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকা। সে হিসাবে একজন দিনমুজুর একদিন কমপক্ষে ২০০ আঁটি আঁশ ছাড়িয়ে কমপক্ষে ৬০০ টাকা আয় করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৫
পিসি/