ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জিএসপি কতোটা জরুরি!

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
জিএসপি কতোটা জরুরি! ফাইল ফটো

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি তালিকায় বাংলাদেশের বাদ পড়াকে নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল আলোচনায় ব্যস্ত। আর ঠিক তখনই মার্কিন জিএসপি বাংলাদেশের জন্য কতোটা জরুরি এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে।



২০১৩ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে তার মাত্র ২ শতাংশ জিএসপি সুবিধা পেত বলে জানা যায় ইপিবি (এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো) সূত্রে। অথচ বাংলাদেশের রফতানি খাতের প্রাণ পোশাকশিল্পের রফতানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৬ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয় ।

ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের জুলাই-মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে মোট ৫ হাজার ১৯৭ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি তালিকায় আছে এমন পণ্য যেমন প্লাস্টিক, গলফ খেলার উপকরণসহ অন্যান্য পণ্য রফতানি হয়েছে প্রায় ১০৩ মিলিয়ন ডলারের। যা আমাদের মোট রফতানির মাত্র ২ শতাংশ। অথচ প্রতি বছর বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক দিতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিএসপি বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খুব একটা জরুরি নয়। তবে জিএসপি ইস্যু আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ইমেজে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। নেতিবাচক প্রভাবে আশংকা খুব বেশি নেই। কারণ গত দুই বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখা হয়। কিছু নেতিবাচকতা বাদ দিলে এই সময়ের মধ্যে নানা ইতিবাচক অর্জনের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বলও হয়েছে। জাতিসংঘসহ বেশ কিছু সংস্থা এসব অর্জনের স্বীকৃতি ও পুরস্কারও দিয়েছে বাংলাদেশকে।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ ছাড়া তেমন কোনো কারণেই জিএসপি ইস্যুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়েছে তার প্রায় ৪৫ শতাংশই ছিলো ওভেন পোশাক  ও নিট ওয়্যার। আগে যখন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেত তখন এর আওতায় মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি হতো। বরং তারাই আমাদের থেকে সুবিধা বেশি নিয়েছে। তারা গড়ে প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আদায় করেছে। মূলত রাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশকে জিএসপি তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর প্রয়োজনীয়তা আমাদের খুব একটা নেই। হয়তো এটি আমাদের ইমেজে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।

‘জিএসপি ইস্যু আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ইমেজ সঙ্কট তৈরি করতে পারবে না’ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দুই বছর আগে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ৯৮ শতাংশই জিএসপি সুবিধা পেত না। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ রফতানি আয়ই হয় পোশাক থেকে। সেই পোশাকশিল্পই জিএসপি সুবিধা পায় না। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানির মাত্র ২ শতাংশ পায় এই জিএসপি সুবিধা। আর তাই আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশকে তেমন কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা নেই নেই। এখন প্রশ্ন হলো, ইমেজ সঙ্কট নিয়ে। বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত হয়েছে ২০১৩ সালে। এরই মধ্যে দুই বছর কেটে গেছে। এর ফলে যে ধরনের সমস্যার হওয়ার আশংকা ছিলো তার ধাক্কা সামাল দেয়ার জন্য দুই বছরে ব্যবসায়ীরা নিজেদের তৈরি করে নিয়েছেন।

ফলে জিএসপি ইস্যু বাংলাদেশের জন্য তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়িক নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।