ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বৈদেশিক ঋণে আগ্রহ কম!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
বৈদেশিক ঋণে আগ্রহ কম!

ঢাকা: মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাজধানী শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। সব প্রকল্পেই সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় মেটানো হবে।


 
রোববার (১৬ আগস্ট) আরেক সাফল্যের তথ্য দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ইআরডি’র দেওয়া বা‍ৎসরিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে।
 
এছাড়া ২৮ হাজার ৭শ’ ৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।
 
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট প্রতিশ্রুতি এসেছে ৫২১ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৪৭৫ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার এবং অনুদান ৪৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
 
তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল ৫৮৪ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৫৩৪ কোটি ৪৮ লাখ মার্কিন ডলার এবং অনুদান ছিল ৫০ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার।
 
এক বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ কমেছে ৬৩ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ বাংলাদেশ এর থেকে কম বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে।
 
বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কম প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। পদ্মাসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এছাড়া বিদেশের কাছ থেকে ঋণ নিলে তারা নানা ধরণের শর্তও জুড়ে দেয়। ’
 
২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বেশি অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০০ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার অর্থ ছাড় করেছে। এর মধ্যে ঋণ ২৪৪ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং অনুদান ৫৬ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার ডলার।
 
২০১৩-১৪ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করেছিল ৩০০ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার । এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ২২৮ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ছিল ৭২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ডলার।
 
২০১৩-১৪ অর্থবছরে তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমেছে প্রায় ১৮ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ মাত্র ১১০ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সুদ ১৮ কোটি ২৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আসল ৯২ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার।
 
তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের  পরিমাণ ছিল ১২৯ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আসল ছিল ১০৮ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং সুদ ছিল ২০ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার।
 
বরাবরের মতো এবারও সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। এই সংস্থাটি মোট অর্থ ছাড় করেছে ১০১ কোটি ৩৩ লাখ ৯০০ হাজার ডলার।
 
এছাড়া, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৭১ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ১২ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার জাপান ২৯ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, ভারত ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার এবং চীন ছাড় করেছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার।
 
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাইপ লাইনে থাকা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে না পারা এবং বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতার অভাব দেখা দিয়েছে। যে ‍কারণে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে।
 
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জাহিদ বখত বাংলানিউজকে বলেন, অনেক কমিটমেন্ট পড়ে আছে। আমরা তা ব্যবহার করতে পারছি না। যে কারণে বৈদেশিক সাহায্য কমে গেছে। আমাদের যেটুকু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা আমরা ব্যবহার করতে পারছি। যে কারণে উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদের নতুন কমিটমেন্ট দিচ্ছে না। ’
 
‘মেট্রোরেল থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এতে করে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি আসবে। ’
 
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্প সুদে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ যদি পায় তবে তা কাজে লাগালে দোষের কিছু নেই। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
এমআইএস/কেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।