ঢাকা: পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রও এটি।
তাই চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে রেল মন্ত্রণালয়। ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পে ব্যয়ের এক বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা, ১ ডলার= ৮০ টাকা) সহযোগিতা হিসেবে দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি অর্থ দেবে সরকার।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কলাতলী পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এই বিষয়ে কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের আওতায় আরও কিছু সমন্বিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এরমধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরে টঙ্গী-ভৈরববাজার-আখাউড়া মিটার গেজ ডাবল ট্র্যাকে রূপান্তার, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরে লাকসাম-চট্টগ্রাম মিটার গেজ ডাবল ট্র্যাকে প্রতিস্থাপন এবং ফৌজদারহাট-চট্টগ্রাম বন্দর সেকশনের মিটার গেজ ডাবল ট্র্যাককে রূপান্তার করা।
এছাড়া চট্টগ্রাম রন্দরের রেল কন্টেইনার টার্মিনালের রি-মডেলিং, চট্টগ্রাম-দোহাজারীর বর্তমান মিটার গেজ লাইনকে ডাবল ট্র্যাকে রূপান্তার, একটি নতুন অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ এবং গাজীপুর পুবাইল-ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে সংযোগ লাইন নির্মাণ করা হবে।
চট্টগ্রাম ডুয়েল গেজ রেলিং স্টকের জন্য ক্যারেজ-ওয়াগন, লোকো ওয়ার্কশপ, ফুয়েলিং ব্যবস্থা ও আলাদা ডিপো স্থাপন করা হবে বলেও জানান তারা।
রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাজনীন আরা কেয়া বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছে কলাতলী রেলপথটি বাড়ানো হবে।
‘প্রকল্পের আওতায় সেখানে প্রায় ১০০কিলোমিটার ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। এতে কিছু মহাপরিকল্পনাও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ’
তিনি বলেন,‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত ২৮কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ ও ডুয়েল গেজ লাইনের ব্যবস্থা রাখায় ব্যয়ের তারতম্য হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫২ কেজির পরিবর্তে ৬০কেজি রেল ব্যবহার করা করা হবে।
প্রয়োজনীয় রেল সংগ্রহ, স্পেশাল উডেন স্লিপার, ব্যালাস্ট, মাটির কাজসহ ছয়টি স্টেশন ভবন পুনঃনির্মাণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায়ও ছোট বড় সেতু পুনঃনির্মাণ তো আছেই। ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কাজ বিবেচনা করে ঋণ দিচ্ছে এডিবি। প্রকল্পটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের জন্য রেল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেল মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্যতম পর্যটন এরিয়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এছাড়া মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ এ অঞ্চলে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ’
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেল পথে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে যাতায়াত করা যাবে বলেও জানান ফিরোজ সালাহ উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৫
এমআইএস/এমএ
** কালুখালী থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত নতুন রেলপথ