ঢাকা: দেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি থাকলেও প্রায় চার শতাধিক কোম্পানি কর ফাঁকি দিয়ে চলেছে। বাইরে বলে জানা গেছে।
এসব কোম্পানির মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) নিবন্ধন ও ইলেকট্রনিক কর সনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন বা আয়কর সনদপত্র) সনদপত্র নেই বলেও জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র (এনবিআর) তদারকি না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ওনার্স এসোসিয়েশন (বিএসএসসিওএ) ও এনবিআর’র একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতে নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে ঢাকা সারাদেশে প্রায় ৫ শতাধিক প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই রয়েছে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এ খাতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছর এতে নতুন ১০-১২টি কোম্পানি যোগ হচ্ছে।
সূত্র মতে, সিকিউরিটি কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিধান না থাকায় অনেকেই মাত্র একটি ট্রেড লাইন্সেস দিয়ে নামে লিমিটেড কোম্পানি খুলে বসছে।
যদিও একটি লিমিটেড কোম্পানি খুলতে হলে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (আরজেএসসি) থেকে সনদপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক।
ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে মূসক ও আয়কর সনদ যাচাই করা হয় না। তবে এনবিআর’র মাঠ পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তারা তাদের সহায়তা করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, শতাধিক কোম্পানির মূসক নিবন্ধন ও আয়কর সনদপত্র রয়েছে। এসব কোম্পানিকে নিয়মিত কর পরিশোধ করতে হয়।
এসব কোম্পানিকে নিয়মিত ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট কর, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১.৫ শতাংশ উৎসে কর, ০.৫ শতাংশ টার্নওভার করসহ সর্বমোট ৬০.৫০ শতাংশ কর দিতে হয়।
যদিও বিশ্বের কোথাও সিকিউরিটি সার্ভিস খাতকে কর দিতে হয় না। শতাধিক কোম্পানির বাইরে বাকি কোম্পানিগুলো বা নতুন যোগ হওয়া কোম্পানি কর আওতার বাইরে থেকে যায়।
২০১১-১২ অর্থবছর সরকার এ খাতে সাড়ে ৪ শতাংশ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট ৫২ শতাংশ কর ধার্য করে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬০.৫০ শতাংশ করা হয়।
সূত্র জানায়, বাসা বা অফিসে প্রায় ৮ হাজার টাকায় একজন সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে কর নিবন্ধিত কোম্পানিকে প্রতি মাসে ১ হাজার ১৮০ টাকা কর দিতে হয়।
কিন্তু কর নিবন্ধনের বাইরে থাকা কোম্পানিকে এ কর দিতে হয় না। ফলে তারা নাম মাত্র বেতনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘নিরাপত্তাকর্মী’ সরবরাহ করে থাকে।
এতে কর নিবন্ধনহীন কোম্পানির সাথে নিবন্ধিত কোম্পানির ‘অসম’ প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে। একই সাথে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
বিএসএসসিওএ সহ-সভাপতি ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিবন্ধনহীন’ বেশিরভাগ কোম্পানি কর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কর আওতার বাইরে থেকে যায়।
অনেক কোম্পানি ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে থাকে। ফলে কর কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে কোম্পানি খুঁজে না পাওয়ায় তাদের করের আওতায় আনতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘ স্পর্শকাতর এ কোম্পানি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এনবিআর’র মূসক ও আয়কর সনদপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেনি। নেই কোনো আইন।
এছাড়া এফবিসিসিআই এসব কোম্পানি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সনদপত্র চালু করলেও কর ফাঁকি রোধ ও নিবন্ধিত কোম্পানি অসম প্রতিযোগিতায় পড়তো না। ’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যারা কর দেন তারা উল্টো কর কর্মকর্তাদের নানা হয়রানির শিকার হন। বাদ থেকে যায় নিবন্ধনহীন কোম্পানিগুলো। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা কর পরিশোধ করে একটু বেশি দামে গার্ড সরবরাহ করতে চাইলে অনেক প্রতিষ্ঠান নিতে চায় না। নিবন্ধনহীন কোম্পানিকে এসব না দিয়ে মনোপলি ব্যবসা করছে। ’
এ খাতে একজন গ্রাহকের (ক্লায়েন্ট) সাথে নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহে এক থেকে তিনবছরের জন্য চুক্তি করতে হয়। সেক্ষেত্রে এ কর আদায় সম্ভব হয় না।
এতে প্রায় গ্রাহকের সাথে বির্তক থেকে যায়। এছাড়া পাঁচ শতাধিক কোম্পানি এসব কর না দেওয়ায় বৈষম্য তৈরি ও ব্যবসা হুমকির সম্মুখীন হয়।
করহীন কোম্পানিকে করের আওতায় নিয়ে আসা, নিবন্ধনের ক্ষেত্রে মূসক ও আয়কর সনদ বাধ্যতামূলক করতে এনবিআর-এফসিসিআই প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, যেসব সিকিউরিটি কোম্পানি কর আওতার বাইরে রয়েছে তাদের দ্রুত করের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
জেএম